Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশ টেলি-ভীষণ!


২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৪০

১৯৬৪ সালের শীতকালে পাক প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের উন্নয়ন প্রচারের কাজেই এই ভূখণ্ডে প্রথম টেলিভিশনের আবির্ভাব। শুরুতে নাম ছিল পাকিস্তান টেলিভিশন। বোঝা যায়, বিটিভির এখন যে দলতেলচপচপে অবস্থা, তা তার জন্মব্যাধি। এক সময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে বোমা হামলার পরদিন বিটিভির তার নিজস্ব সংবাদে তাজা ফুটেজ দেখাতে পারলেও নিজ দেশের নীলফামারীর বন্যার ফুটেজ দেখাতে তিনদিন চলে যেত। বিটিভি স্যাটেলাইটে সংযুক্ত হয়ে বিশ্বের খবর যতটা না দেখাত, নিজ দেশের গ্রাম-মফস্বলের খবরে তখনও এতটা উন্নতি হয়নি। সত্তুর পেরিয়ে আশির দশক, ধীর পায়ে এগিয়ে চলে বিটিভি। দেশের প্রান্তিক দর্শকদের মধ্যে তথ্য-বিনোদন আর শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বিটিভির প্রতি বাড়তে থাকে নির্ভরশীলতা।

বিজ্ঞাপন

নব্বুইয়ের দশকে একদিন হুমায়ুন আহমেদ বলছেন হুমায়ুন আজাদকে- ‘স্যার আমার একটি সিরিয়াল বিটিভিতে চলছে। এটা একটু দেখে মূল্যায়ন করবেন।’ হুমায়ুন আজাদ জিজ্ঞেস করলেন- ‘কোন বারে সিরিয়াল দেখায়।’ হুমায়ুন আহমেদের উত্তর ‘মঙ্গলবার।’ ‘তাইতো বলি আমার কাজের মেয়েটা কেন মঙ্গলবারে এত ঘন ঘন টিভিরুমে যায়’- হুমায়ুন আজাদের জবাব! দর্শক-শ্রোতার কাছে টেলিভিশনের প্রভাব সম্পর্কে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন- ‘পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে করে পূজো করতো। আজো সেই পূজো চলতো।’ বিটিভির পূজা এখনও চলছে। শত শত চ্যানেলের ভিড়েও অস্বীকার করার উপায় নেই- বিটিভির সুবর্ণজয়ন্তী সফল হোক। সরকার দলীয় প্রপাগাণ্ডা মেশিনে পরিণত না হলে আর ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগপদ্ধতি না থাকলে দেশের কত বড় সম্পদ হতে পারতো এই বিটিভি!

বিজ্ঞাপন

বিটিভির সাথে যুক্ত আমাদের শৈশব স্মৃতি। বিটিভির রাতের আটটার সংবাদ মানেই গ্রামে আমাদের রাতের ভাত খাওয়ার বিরতি। বিটিভি মানেই- ‘মানিক কী বাত্তি লাগাইলা?’ বিটিভি মানেই ম্যাকগাইভার, দি অ্যাডভেঞ্চারস অব সিন্দবাদ। বিটিভির চোখে আমরা স্বপ্ন রচনা করেছিলাম হারকিউলিসের। বিটিভির ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘কোন কাননের ফুল’ ধারাবাহিক নাটকের জন্য আমাদের অধীর আগ্রহ। বিটিভির ওপর ভরসা থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর ভরসা ছিল না। তাই শুক্রবারের সিনেমার সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার আশঙ্কায় মাথাপিছু দুই টাকা করে দিয়ে ব্যাটারি ভাড়া করে আনা। বিটিভি মানে আলিফ লায়লা, রোবোকপ আর মিস্টেরিয়াস আইল্যান্ড। নিজের থুতনির নিচে যখন একটু একটু দাঁড়ি উঠছে, যখন নিজের ইচ্ছে মতো লম্বা চুল রাখার স্বাধীনতা হলো; তখন বিটিভির রবিনহুড দেখে ভেবেছিলাম, রবিনহুডই হব। আর ছিল আমাদের কালের নায়ক ‘ক্যাপ্টেন প্লানেট’! যেখানেই পরিবেশ দূষণকারী সেখানেই ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের অব্যর্থ আক্রমণ। এই সেই বিটিভি একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বরের পরদিন যার দখল নিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুন! একরাতেই পাকিস্তান টেলিভিশন হয়ে যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন।

কৈশোরিক উত্তেজনা বশে একদিন রামপুরা বিটিভি কেন্দ্রের সদর দরজা টপকে ভেতরে ঢুকি। বিটিভিকে প্রথমবারের দেখার উত্তেজনায় শিহরিত হই। যেন প্রেমিক মিলেছে প্রেমিকার সাথে ঠিকই অথচ শান্তি পায়নি! টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রথম গান গেয়েছিলেন ফেরদৌসী রহমান, গানটি ছিল আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা- এই যে আকাশ নীল হল আজ/এ শুধু তোমার প্রেমে। বিটিভির সদর দরজা পেরিয়েই মনে হলো এক অভিনব পাগল প্রেমিকের মতন আমি ঢুকেছিলাম! আমার আকাশ সেদিন ছিল নীল! বিটিভির জন্মদিনে হারানো শৈশবের জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রতি কৃতজ্ঞতা। আর যাপিত যৌবনে বিটিভির ভূমিকার জন্য এর প্রতি নিন্দা-হতাশা!

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[মত-দ্বিমতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব]

জন্মদিন বাংলাদেশ টেলিভিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর