‘রক্তপাত নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে চাই’
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সন্ত্রাস-রক্তপাত নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনটি শূন্য হয়। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে।
প্রচারণা শুরুর পর প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনোসময় সন্ত্রাসের সাথে ছিলাম না। আমার হাতে কোনো রক্তের দাগ নেই। আমি চাই একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। কোনো রক্তপাত হোক, এটা আমি চাই না। আমি চাই জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে।’
‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ খুবই সুন্দর আছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। আমি চাই, সবার অংশগ্রহণে ভোট হোক। সব প্রার্থী ভোটে থাকুক।’
তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও, যদি জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেন, তাহলে আওয়ামী লীগের লোকজন যেমন আমার কাছে আসতে পারবেন, আওয়ামী লীগের বাইরের লোকজনের জন্যও আমার দুয়ার সবসময় উন্মুক্ত থাকবে। তারাও তাদের কাজের জন্য, সমস্যা সমাধানের জন্য আমার কাছে আসতে পারবেন।’
জীবন সায়াহ্নে এসে দলের কাছে মূল্যায়িত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মোছলেম বলেন, ‘আমি জীবনে কোনোদিন জাসদ করিনি, আমি আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের বাকশালের সাথে যুক্ত ছিলাম না। আমি সবসময় দলের মূলধারার সাথে কাজ করেছি। জিয়াউর রহমান সাহেব তার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, আমি সেটা প্রত্যাখান করেছি। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় আসেন তখনও একই নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমি সেটাও প্রত্যাখান করেছিলাম।’
‘১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন পটিয়া থেকে। তখন অনেক বড় ব্যবধানে অনেক বড় বড় নেতা হেরেছিলেন। আমি সামান্য ভোটে, একবার সাড়ে তিন হাজার, আরেকবার সাড়ে ৭ হাজার ভোটে হেরেছিলাম। ২০০৮ সালের পর নৌকার পালে যখন বেশি বেশি করে বাতাস লাগে, আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায়, সেই থেকে এ পর্যন্ত আমি আর মনোনয়ন পাইনি।’
গত সংসদ নির্বাচনে দিনরাত পরিশ্রম করে মহাজোটের প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদলকে জিতিয়ে আনেন বলে জানান মোছলেম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর সরকার পরিবর্তন হবে না। প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হবে না। সেজন্য আমাদের এলাকার মানুষ চায় উন্নয়ন। শেখ হাসিনার আমলে সারাদেশে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তার ছোঁয়া কম লেগেছে বোয়ালখালীতে। এর আগে বারবার যারা বোয়ালখালীতে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা অনেকে ধনাঢ্য মানুষ, তারা বোয়ালখালীর জন্য কাজ করেননি। মঈনউদ্দিন খান বাদল নির্বাচিত হওয়ার পর কিছু কিছু কাজ হয়েছে।’
মোছলেম উদ্দিন বলেন, নির্বাচিত হলে প্রথম ও প্রধান কাজ হবে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ দৃশ্যমান করা। ‘২০১০ সালে কর্ণফুলীতে তৃতীয় সেতুর উদ্বোধন করার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে এসেছিলেন। সেখানে জননেতা আক্তারুজ্জামান বাবু ও আমি দাবি করেছিলাম, কালুরঘাটে আরেকটি সেতু করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী সেখানেই ঘোষণা করেছিলেন, কালুরঘাটে সেতু করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সেটা এতদিনেও হয়নি। আমার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হবে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সেতুর কাজটি দৃশ্যমান করা। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে সেটা আদায় করে নেব। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, আগামী এক বছরের মধ্যে আমি এই সেতুর কাজ দৃশ্যমান করব।’ যোগ করেন তিনি।
এছাড়া, বোয়ালখালীকে শিল্পনগর করা, রাঙ্গুনিয়ার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ, পটিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সড়কগুলোকে প্রশস্ত করা, বোয়ালখালী পৌরসভাকে এক নম্বরে উন্নীত করাসহ আরও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন মোছলেম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে ফেরেশতা দাবি করব না। তবে এলাকার মাটিতে জন্ম হিসেবে আমার চেয়ে মায়া-মমতা আর কারও বেশি হবে না। আমাকে ভোট না দিয়ে ধানের শীষে ভোট দিলে এলাকায় বেশি কাজ হবে না। নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করলে আমি এলাকার অনেক বেশি উন্নয়ন করতে পারব। আমি কোনো প্রার্থীকে ছোট করে দেখি না। তারপরও বলছি, বিএনপি বলছে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নাকি তারা ভোট করছেন। আমরা বলছি, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভোট চাই।’
মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন ছিলেন।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম-৮ মঈনুদ্দিন খান বাদল