Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাছির-নদভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর


২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন। আর নদভীর বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোটকেন্দ্র দখলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন আবু সুফিয়ান।

বিজ্ঞাপন

উভয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের কথা আবু সুফিয়ান জানালেও নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাননি।

আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। মেয়র এবং এমপি পদে থেকে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করার বিষয়টি কমিশনকে জানিয়েছি এবং প্রতিকার প্রার্থনা করেছি। আমি চাই, একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হোক। আমরা সবাই যেন আইন মেনে চলি এবং জনগণকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিই। এজন্য যেসব জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, সেগুলো কমিশনকে জানাচ্ছি। আশা করি, আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে তারা উদ্যোগী হবেন এবং যারা ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’

গত ৭ নভেম্বর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল মারা যাবার পর চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ জানুয়ারি ওই আসনে উপ-নির্বাচন হবে। উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং ধানের শীষ প্রতীকে একই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।

প্রচারণা শুরুর দুইদিনের মাথায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খানের ‍কাছে এবং বৃহস্পতিবার সাংসদ নদভীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আবু সুফিয়ান।

বিজ্ঞাপন

মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় এলাকার মধ্যে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার এ-ব্লকের ১ নম্বর সড়কে নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে।

এর মাধ্যমে মেয়র নিবাচনী আচরণ বিধিমালা-২০০৮ ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করে আবু সুফিয়ান আরও উল্লেখ করেন- মেয়রের এই ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী এবং কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবাচনের জন্য সহায়ক নয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মেয়রের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেব কার্যালয় উদ্বোধন করেননি। দলের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে করেছিলেন। এতে কোনো ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়নি বলে আমরা মনে করি।’

উল্লেখ্য, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন- প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চীফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার তিনি নগরীর লালখান বাজারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বাসায় এক সভায় অংশ নেন। ওই সভায় প্রার্থীর উপস্থিতিতে চান্দগাঁও থানা এলাকায় ভোটের দিন কেন্দ্র দখল ও পেশীশক্তির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের নীলনকশা সহকর্মীদের অবহিত করেন। আশপাশের এলাকায়ও একই কায়দায় ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।

নদভীর এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বলে উল্লেখ করে আবু সুফিয়ান বলেছেন, ‘সাংসদের এমন বক্তব্যের পর আদৌ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না, সেটা নিয়ে তিনি সন্দিহান। সাংসদের বক্তব্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ নদভী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন সাহেবের বাসায় মতবিনিময় সভা ছিল, এটা কোনো নির্বাচনী প্রচারণার সভা ছিল না। মতবিনিময় সভায় গেলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় না। আর সেখানে আমি বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে আইন মেনে কিভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম, সেটি তুলে ধরেছি। সেখানে জবরদস্তি করা, ভোটকেন্দ্র দখলে নেওয়া- এই ধরনের কোনো কথাই আমার মুখ থেকে আসেনি। কয়েকটি গণমাধ্যমে আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সম্ভবত। এটা খুবই দুঃখজনক।’

এদিকে আবু সুফিয়ান সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম বরাবর বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) আরেকটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে বলা হয়েছে, বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে রঙিন কাপড় দিয়ে আস্ত নৌকা এবং নানা রঙের নৌকা প্রতীকের তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার পাশাপাশি নির্বাচনী আইনেরও পরিপন্থী।

জানতে চাইলে উপনির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। আমরা তো মাঠে আছি। নির্বাচনের খুব সুন্দর পরিবেশ আছে। প্রার্থীরা সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা করছেন। আশা করছি, শেষদিন পর্যন্ত সুন্দর পরিবেশ থাকবে।’

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্ভবত অভিযোগগুলো ডেসপাসে জমা দিয়েছে। আমরা তো নির্বাচন নিয়ে খুবই ব্যস্ত। সেজন্য হয়ত এখনও আমাদের হাতে আসেনি।’

আ জ ম নাছির উদ্দীন আচরণবিধি আচরণবিধি লঙ্ঘন ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর