আগারগাঁওয়ের ধুলাময় সড়কে হঠাৎ পানি, বিস্মিত ম্যাজিস্টেট!
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৫২
ঢাকা: এ বছর শীতের শুরু থেকেই রাজধানীজুড়ে ধুলার প্রকোপ ছিল অনেক বেশি। উচ্চ আদালত থেকেও ধুলা আর দূষণ থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে এসেছে নির্দেশনা। পরে দূষণ রোধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এমনই এক অভিযানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এসেছিলেন ডিএনসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ হোসেন। কিন্তু বিস্ময় কাটে না তার। শীতের শুরু থেকেই ধুলায় ধূসরিত এই এলাকার সড়কে নেই একফোঁটা ধূলিকণা! সড়কজুড়ে ছড়িয়ে আছে পানি আর পানি!
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে এমন ঘটনার সাক্ষী হন মাসুদ হোসেন। অবশ্য কেবল তিনি নন, এলাকাবাসীর বিস্ময়ও কাটছে না আচমকা এমন ঘটনায়।
আগারগাঁও বিএনপি বাজারের মুদি দোকারদার আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত কাউকে পানি ছিটাতে দেখিনি। কিন্তু আজ সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি, রাস্তাজুড়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। পানি ছিটানোর ফলে রাস্তায় রীতিমতো কাঁদা তৈরি হয়ে গেছে।’ আব্দুস সাত্তার জানালেন, ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে আসবেন বলেই পানি ছিটানোর এই আয়োজন করা হয়েছে বলে লোকমুখে শুনেছেন তিনি।
স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানদার রুহুল আমিন বলেন, সকালে পানি দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে জানলাম অভিযানের কথা। পানি ছিটানোতে ভালোই হয়েছে। কিন্তু অভিযানের খবর পেয়ে আজ পানি ছিটাচ্ছে, কাল তো আর অভিযান হবে না। কাল কি তারা পানি ছিটাবে? আমাদের দাবি, প্রতিদিন এভাবে পানি ছিটানো হোক রাস্তায়। আমরা ধুলা থেকে মুক্তি চাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগারগাঁও এলাকার সব সড়কের পাশে কোনো না কোনো উন্নয়নের কাজ চলছে। কোথাও ভবন নির্মাণ হচ্ছে, কোথাও চলছে সড়ক উন্নয়নের কাজ। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি তো আছেই। স্থানীয়রা বলছেন, এসব নির্মাণকাজে নিয়োজিত কেউই নিয়ম মানেন না। নির্মাণ কাজের জন্য প্রচুর ধুলা তৈরি হলেও তারা পানি ছিটানোর নামও মুখে আনেন না। ফলে প্রতিদিন ধুলায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা।
এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়। সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান শুরু করতে গিয়েই দেখেন, ওই জায়গায় পানি ছিটিয়ে ধুলা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরে অন্য একটি স্থানে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখেন, সেখানেও ছিটানো হয়েছে পানি। শেষ পর্যন্ত পরিবেশ দূষণ অভিযানে এসে ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে ক্ষান্ত হন।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, রাজধানীর সবচেয়ে বেশি ডেভেলপারের কাজ হচ্ছে এ মুহূর্তে আগারগাঁও এলাকায়। এজন্য সেখানকার ডেভেলপারদের বারবার নোটিশ করেও পরিবেশ দূষণ ঠেকানো যাচ্ছিল না। তাই আজ অভিযানে আসি আমরা। কিন্তু এসে দেখি সবাই ‘ভালো হয়ে গেছে’। অর্থাৎ সবার নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রেখেছে, সড়কে পানি ছিটিয়েছে। এতে আমি বিস্মিত হয়েছি। তবে ভালো লেগেছে যে তারা চাপে পড়ে হলেও নিয়ম মানতে শুরু করেছে। কিন্তু এটি যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য আমরা কাল থেকে তাদের অ্যাকটিভিটি ফলোআপ করব।
ডিএনসিসি’র এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, আজকের অভিযানে পরিবেশ দূষণের অপরাধে ইউনিসেফের নির্মাণাধীন কার্যালয়ে ভবন নির্মাণকাজে প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিনিয়ার আরিফ ও আমিনুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আগারগাঁও এলাকায় শ্যামলী শিশুমেলা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে প্রায় শতাধিক অবৈধ নার্সারি এবং ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কার্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে খোলা মাটি রেখে বায়ু দূষণ সহায়ক পরিবেশ তৈরি করায় তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।
আরও পড়ুন-
ঢাকার চারপাশের বায়ু দূষণ ঠেকাতে নীতিমালা হচ্ছে
অভিযান আগারগাঁও ধুলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিবেশ দূষণ পানি ছিটানো