‘আমরার কোনো শীত নাই’
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৬
ঢাকা: আমরার কোনো শীত নাই। ব্যবসা করতে অইলে শীতো বইয়া থাখলে অইতো নায়। শীতো বইয়া থাখলে খাওয়া জুটতো নায়। (আমাদের কোনো শীত নেই। ব্যবসা করতে এসে শীতে বসে থাকলে তো হবে না। শীতে বসে থাকলে খাবার জুটবে না।)
শীতের তীব্রতা উপেক্ষা গুলশান-১-এর গুদারাঘাট এলাকায় ফেরি করে হরেক রকম মাল বিক্রি করছিলেন জুবায়ের। কুয়াশাচ্ছন্ন আর বৃষ্টিভেজা সকালে শীতের তীব্রতায় যখন খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি কেউ, সেই সকালে শুধু একটি শার্ট পরেই রাজধানীর সড়কে জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। শীতের পোশাকের কথা জানতে চাইলে এই প্রতিবদককে ওপরের কথাগুলো বলেন জুবায়ের।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সপ্তাহের ছুটির দিনটির সকাল ছিল বেশ শীতল। রাতভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজেছে শহর। লেপ-কম্বলের মায়া কাটিয়ে তাই খুব কম মানুষই সকালে নেমেছেন পথে। কিন্তু ছুটি কাটানোর জো নেই জুবায়েরসহ তার মতো মানুষদের। পথেই যে তাদের জীবিকা, আর তার জন্য নেই সুনির্দিষ্ট কোনো ক্ষণ। তাই শীতের সকালেও একহাতে রকমারি হাড়ি-পাতিল, আরেক হাতে খেলনাসহ অন্য মালামাল নিয়ে জুবায়ের বেরিয়েছেন সাতসকালেই।
গুদারাঘাট এলাকায় কথা হয় জুবায়েরের সঙ্গে। জানালেন, গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। জীবিকার তাগিদে ছুটে এসেছেন ঢাকায়। বেছে নিয়েছেন মালামাল ফেরি করার পেশা। শীত-গরম যাই হোক না কেন, সকাল সকাল মালামাল নিয়ে বেরিয়ে পড়াই সারাবছরের রুটিন তার।
শুধু একটি শার্টে শীত মানে কি না— জানতে চাইলে জুবায়ের বলেন, শীতে ঘরে খ্যাতা (কাঁথা) পেঁচিয়ে বসে থাকলে তো খাবার জুটবে না। শীত তো লাগেই। কিন্তু মাল বিক্রি না হলে দুপুর খাবো কী? মালামাল বিক্রি করেই খেতে হবে, বাড়িতে পাঠানোর টাকা গোছাতে হবে।
জুবায়ের অবশ্য একা নন, ঢাকায় তার মামা তারেকুল ইসলামর সঙ্গে ব্যবসা করেন ররকামরি মালের। মামা তারেকুলও ছিলেন তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকায় এলাকায় এসব হরেক মাল বিক্রি করি। চুলের বিনিময়ে বিক্রি করি। দিন শেষে তিনশ টাকা, কোনোদিন পাঁচশ টাকা থাকে। মালিকের জমা, খাবার খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা থাকে। ওই টাকা বিকাশ করে গ্রামে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেই। তাই দিয়ে বাচ্চাদের পড়ালেখা, সংসার খরচ চলে। এখন শীত বলে বসে থাকলে তো আর চলবে না। ব্যবসা করতে হলে তো বের হতেই হবে।
জুবায়ের-তারেকুলের মতো রকমারি মালামালের ব্যবসা করেন যারা, তাদের সবাইকেই এরকম প্রতিদিন সাতসকালে বেরিয়ে পড়তে হয় বলে জানালেন তারা। তাদের মতো অন্য শ্রমজীবী যারা আছেন, তাদেরও উপেক্ষা করতে হয় শীতের দাপট। রিকশাচালকদের অনেকেই এই শীতের বৃষ্টির রাতেও ছিলেন সড়কে যাত্রীর অপেক্ষায়। দিনমজুর যারা, তারাও এভাবে প্রতিদিন বেরিয়ে পড়েন কাজের খোঁজে। শীত-গরমে অন্য অনেকের গেলে আসলেও তাদের কিছু যায় আসে না।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরতে থাকলেও আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেটে যাবে মেঘলা আকাশ। তবে রোববার থেকে ফের শুরু হবে বৃষ্টি, চলবে টানা একসপ্তাহ।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য আরও বলছে, বছরের শেষ তিন দিনসহ আসছে বছরের শুরুর চার দিন— অর্থাৎ দুই বছরের সন্ধিক্ষণের পুরো সপ্তাহজুড়েই থাকতে পারে বৃষ্টি। এর মধ্যে বছরের শেষ দিন— ২৯, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকবে হালকা বৃষ্টি। তবে নতুন বছরের শুরুর চার দিন— ১ থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই বৃষ্টি হালকা থেকে মাঝারিতে রূপ নেবে।
এই সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি থাকলেও আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলছেন, এতে করে দিনের তাপমাত্রায় তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে রাতের দিকে তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
এই আবহাওয়াবিদ আরও জানান, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নওগাঁও ও সিরাজগঞ্জসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। অর্থাৎ দেশের এই অঞ্চলগুলোতে শীতের তীব্রতা কমার সম্ভাবনা নেই।