Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাহজালাল টার্মিনাল ৩ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:১৭

ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ উপলক্ষে জমকালো আয়োজনে সাজানো হয়েছে নির্মাণস্থল। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাগোয়া দক্ষিণ পাশের বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে তৈরি করা হয়েছে বিশাল তিনটি প্যান্ডেল।

বিজ্ঞাপন

এর আগে সকাল ১০টায় বিমানবন্দরে এসেই জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে নতুন যুক্ত হওয়া বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ সিরিজের নতুন দু’টি উড়োজাহাজ ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে টার্মিনাল-৩ এর উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) মাধ্যমে জাপানি কোম্পানি মিতসুবিশি, ফুজিটা ও কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং-এ তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ করবে। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগবে চার বছর।

বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে মহাখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে টার্মিনাল-৩ এর প্রতিকৃতিতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে রাখা হয়েছে বিশালাকৃতির টার্মিনালের নকশা। অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল নির্মাণে খরচ হবে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রীসেবা দিতে সক্ষম। এটি নির্মিত হলে এ বিমানবন্দর দিয়ে বছরে মোট ২ কোটি যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। নতুন এ টার্মিনালের মূলভবনের কলাম, সিলিংসহ বিভিন্ন স্থানের ডিজাইনে পদ্মফুলের নকশা থাকবে। টার্মিনালটি হবে অটোমেটেড। দেখতে হবে অনেকটা পদ্মফুলের মতো।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটির আয়তন হবে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। লম্বা ৭শ মিটার ও চওড়া ২শ মিটার। এ ভবনটির নকশা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিঙ্গাপুরের সিপিজি করপোরেশন (প্রাইভেট) লিমিডেটের স্থপতি রুহানি বাহারিন। রুহানি বাহারিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নকশা করেছেন।

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। বিদেশ থেকে আসার ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে।

টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথ এবং উড়ালসেতু নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থাও থাকবে।

তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকবে লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধাও।

এই টার্মিনালে যাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে গ্রাউন্ড সেবায়ও আসবে পরিবর্তন। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে বিমান ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। টার্মিনালটির কাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। টার্মিনালটি নির্মাণ হলে এটি হবে এ অঞ্চলের সেরা বিমানবন্দর।

গত প্রায় ৭ বছর ধরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ক্ষমতাসীন সরকার। দীর্ঘ বন্ধুর পথ পেরিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধনী ব্যয় বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। মূল প্রকল্পে ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর পর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার এবং জাপানের জাইকা ঋণ হিসেবে দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত থাকলেও প্রথম সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। তবে গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ২১১ কোটি ৪২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

টার্মিনাল ৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়ুল মোক্তাদির চৌধুরী, বিমানের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ইনামুল বারি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, বিমান সচিব মহিবুল হক, বিমানের এমডি মোকাব্বের হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্টদূত নাইকো ইতো জাপান সরকারের দাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) হিতৈশী হিরারা।

টার্মিনাল ৩ এর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর