এক সপ্তাহে দুই বিস্ফোরণ, আতঙ্কে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৫৬
ঢাকা: আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজনৈতিক পরিবেশ। গত এক সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে দুবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে জড়িয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। এসব ঘটনায় আতঙ্কে আছেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) মধুর ক্যান্টিনের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের পর কলা ভবন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের বেশিরভাগ বিভাগের ক্লাস বাতিল হয়ে যায়। ক্লাস টেস্ট ও মিডটার্মের মত পরীক্ষাগুলো নেয়নি অনেক শিক্ষক। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থী উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো কম।
অর্থনৈতিক বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ সৌরভ সারাবাংলাকে বলেন, ‘১১টায় আমাদের একটা পরীক্ষা ছিল। এর আগে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে গত কয়েক বছর শান্তিতে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এই পরিবেশে কারা কারা রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে জানি না, তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপদ বাড়বে নিশ্চিত।’
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ৪০তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনাটি দেখেছেন শাহাদাত। শিক্ষাজীবনে এটিই এখন তার কাছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা। তিনি বলেন, ‘কে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, কারা ঘটিয়েছে সেটি হয়তো নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে যারা এই কাজটি করেছেন তারা কোনভাবেই শিক্ষা পক্ষের মানুষ নয়। প্রশাসনের উচিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করা। না হলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
রোববার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের সামনে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে কে বা কারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে এই জায়গাটিতে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরুকে বেধড়ক মারপিট করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এর কয়েকদিন পর একই জায়গায় আরও একটি ককটেলের বিস্ফোরণ হয়।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ডাকসুর নিয়ন্ত্রণের জন্যই ছাত্রলীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ আরও কয়েকটি ছাত্রসংগঠন নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করতে শক্তি প্রদর্শন করছে।
ঘটনায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মন্তব্য পাওয়া যায়নি ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরুরও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘এসব ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রক্টর বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে বারবার এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। আমরা অবশ্যই তাদেরকে ছাড় দেব না। তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালের নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হবে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে কিছুদিন ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, চলমান পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত করা হবে।