নওফেলের বিরুদ্ধে ‘প্রভাব বিস্তারের’ অভিযোগ বিএনপি প্রার্থীর
২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সভা করায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কার্যালয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তার অভিযোগ- শিক্ষা উপমন্ত্রী একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়ায় তার মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষক-শিক্ষিকরা নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
এছাড়া বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণার গাড়িতে হামলা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার লিখিত অভিযোগও করেছেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) আবু সুফিয়ানের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে অভিযোগ দুটি জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাবার কথা জানিয়ে রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কমিশন ব্যবস্থা নেবে।’
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চশমাহিলে নিজ বাসভবনে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে নির্বাচনি মতবিনিময় সভা করেন নওফেল। এসময় তিনি মোছলেমের জয় নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য এবং কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিষয়টি উল্লেখ করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগে আবু সুফিয়ান উল্লেখ করেছেন, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং একজন সংসদ সদস্য। তার অধীনস্থ মন্ত্রণালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্বাচনে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষা উপমন্ত্রী একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়ায় আমাদের মনে শঙ্কা, ভয় ও সন্দেহ জেগেছে যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। শিক্ষা উপমন্ত্রীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত এবং প্রভাব বিস্তারের নোংরা কৌশল। দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ করা দুঃখজনক।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে- আমি যে এলাকায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে যাইনি। নিজের বাসায় বসে পতাকা এবং কোনো ধরনের প্রটৌকল ব্যবহার না করে ওই সংসদীয় এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। রাষ্ট্রীয় প্রটৌকল ব্যবহার না করে এই ধরনের সভা করার আইনসম্মত অধিকার আমার আছে। আমি আইন জেনেই বলছি, এ অধিকার আমার আছে। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়ানোর অধিকার আমার আছে, যদি আমি পুলিশ ও পতাকা ব্যবহার না করি।’
গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় এলাকার মধ্যে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার এ-ব্লকের ১ নম্বর সড়কে নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর গত ২৫ ডিসেম্বর নগরীর লালখান বাজারে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বাসায় নির্বাচনি মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের দক্ষিণের কয়েকজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান ২৫ ডিসেম্বর মেয়রের বিরুদ্ধে এবং ২৬ ডিসেম্বর সাংসদ নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এদিকে রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের কাছে দেওয়া আরেকটি অভিযোগে আবু সুফিয়ান উল্লেখ করেন, প্রচারণা শেষ করে আসার পথে তার কর্মীদের বহনকারী একটি নোহা মাইক্রোবাস নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীরা ভাংচুর করেছেন। এসময় গাড়িতে থাকা কার কয়েকজন কর্মী আহত হন। এছাড়া নির্বাচনি আসনের বিভিন্ন এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীরা মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে তার পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে এবং তার কর্মীদের হুমকিধমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র ও একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। আমি এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রতিকার চেয়েছি। তাদের পথ ধরে একজন উপমন্ত্রীও একই কাজ করলেন। সেটাও আমি লিখিতভাবে রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি। সরকারী দলের দায়িত্বশীল নেতাদের আচরণে আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না, সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আমার এলাকার মানুষও ভীতসন্ত্রস্ত। আমি চাই নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক।’
গত ৭ নভেম্বর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল মারা যাবার পর চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ জানুয়ারি ওই আসনে উপ-নির্বাচন হবে। উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং ধানের শীষ প্রতীকে একই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।