প্রশ্নফাঁসে শিক্ষকরাও জড়িত: র্যাব
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২০:৪৯ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৪১
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে কোনো না কোনো শিক্ষকই জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন র্যাবের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, শুধু গণিতের প্রশ্নপত্র ছাড়া প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে। সকালে যখন শিক্ষকরা প্রশ্নপত্রের বান্ডেল খোলেন ঠিক তখনি কোনো এক শিক্ষক প্রশ্নের ছবি তুলে চুক্তি হওয়া গ্রুপে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের পর সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপকালে র্যাবের দুজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
ওই দুজন কর্মকর্তা আরও বলেন, শিক্ষকরাই মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস ও সমাধান করে দিচ্ছেন। গত কয়েকদিনে সারাদেশে মোট ২৮ জন শিক্ষক ও ছাত্রকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য উঠে এসেছে। আসামিদের স্বীকারোক্তি ও র্যাবের নিজস্ব অনুসন্ধানে তারা শিক্ষকদেরই অভিযুক্ত হিসেবে পাচ্ছেন। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয়ের কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে তা আগের দিনই হতো। কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। সব প্রশ্নই সকালের দিকে ফাঁস হচ্ছে। বিজিপ্রেসেরও কেউ জড়িত নয় বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে র্যাব।
ওই দুজন কর্মকর্তা বলেন, এখন শিক্ষকরা নিজেরা প্রশ্ন সরবরাহের পাশাপাশি প্রশ্নপত্রের সমাধান করে দিচ্ছেন । এমনকি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে প্রশ্ন সমাধান করে ওইসব ছাত্রদের পড়ানোর পর পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করানোর প্রমাণও তাদের কাছে রয়েছে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, গণিতের প্রশ্ন আগের রাতে ফাঁস হলেও দুই তিন মাস আগেই প্রশ্নের সেট ঠিক করার সময় ছবি তুলে রাখা হয়। আর সেটাই হাতে লিখে ফাঁস করা হয়। পরীক্ষার আগের রাতে কোনো কর্মকর্তাও এটি ফাঁস করে থাকতে পারে। তবে সবকিছুই খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
এর আগে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরখানের ক্যামব্রিজ হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তানভীর হোসেন ও গণিতের শিক্ষক সজীবুর রহমান, উত্তরখান সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের দুই শিক্ষক এনামুল হক ও ইব্রাহীম এবং ফেইসবুকে প্রশ্ন ফাঁস করেন এ রকম এক অ্যাডমিন হাসানুর রহমান রকিকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। সোমবার সকালে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করার কথা স্বীকার করেছেন।
অ্যাডমিন রকির কাছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় তা সবাই জানে। তাকে রকি ভাই নামেই চেনে। এই জগতে সবাই তাকে এই লাইনের হোতা বলেই জানে। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার সবকটি প্রশ্নই রকির কাছে পেয়েছে র্যাব।
মিডিয়া শাখার পরিচালক বলেন, রকি টপ টেন, আড্ডা, ব্লাড ডোনেশন-১, ব্লাড ডোনেশন-২ এবং ব্লাড ডোনেশন-৩ নামে মোট ৫টি অ্যাডমিন পরিচালনা করতেন। তিনি একটি পরীক্ষার জন্য একটি মাত্র গ্রুপই খুলতেন। সেই গ্রুপে প্রথমে সাজেশন পাওয়া যাবে মর্মে সদস্য সংগ্রহ করেন। যারা সদস্য হয়ে যান তাদের প্রমাণপত্র হিসেবে প্রবেশপত্রের ফটোকপি নেওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র দিতেন। পরীক্ষা শেষে গ্রুপটি ডিলেট করে দিয়ে নতুন করে গ্রুপ খুলতেন।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, রকি চার বছর থেকে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এই আয় দিয়েই রকি উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়াশুনার খরচ চালান। রকি কার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে মূল জায়গায় যেতে সময় লাগবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আর জড়িত ৫ জনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ