ঢাকা সিএমএইচে মা-ছেলে, এখনো জানেন না স্বজনদের মৃত্যুর খবর
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো : দুইদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও দুই মেয়ের মৃত্যুর কথা এখনও জানেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান খান মিন্টুর স্ত্রী কণিকা খান। আহত শিশুপুত্র মন্টি খানও এখনও জানে না তার বাবা ও দুই বোন আর এই পৃথিবীতে নেই। চিকিৎসাধীন মা ও ছেলের মধ্যে মায়ের জ্ঞান মাঝে মাঝে ফিরছে। ছেলে এখনও প্রায় সংজ্ঞাহীন। তাদের বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বজনেরা। জ্ঞান ফিরলে আপনজন হারানোর ব্যাথা তারা কিভাবে সইবেন- তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় মা ও ছেলেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে ঢাকায় সিএমএইচে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলবে বলে জানিয়েছেন নিহত সাইফুজ্জামান খান মিন্টুর বড় ভাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ড. মোস্তফা কামাল খান।
মোস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মায়ের জ্ঞান ফিরেছে। মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু ছেলে এখনও চোখ খোলেনি। মাঝে মাঝে শুধু হাতের দু’য়েকটা আঙ্গুল নাড়াচ্ছে।’
প্রাইভেটকারে লরির ধাক্কা, দুই মেয়েসহ ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু
দুর্ঘটনার পর থেকে সার্বক্ষণিকভাবে পরিবারটির পাশে আছেন সাইফুজ্জামান খান মিন্টুর বন্ধু চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক এবং মিন্টুর বড় ভাই বিজিবি কর্মকর্তা কর্ণেল জেড আই নজরুল ইসলাম খানের বন্ধু চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন।
বিজয় কুমার বসাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাবির (কণিকা) জ্ঞান ফিরলেও ডাক্তারের পরামর্শে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে আমার কেন জানি মনে হয়, তিনি বুঝতে পেরেছেন। কারণ তিনি ছেলে ছাড়া আর কারও কথা জিজ্ঞেস করছেন না। বিষয়টি এত কষ্টের, ভাবি এবং ছেলেটা কিভাবে সহ্য করবেন সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।’
শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন, ভাবির (কণিকা) কোমর ভেঙ্গে গেছে। বাচ্চাটার মাথায় গুরুতর আঘাত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ করে দেন। প্রথমদিকে ডাক্তাররা বলেছিলেন, ভাবি বেঁচে গেলেও ছেলেকে বাঁচাতে পারবেন না। এখন অবশ্যই দুজনের অবস্থাই উন্নতির দিকে বলছেন তারা।’
গত ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট বাইপাস মোড়ে ঢাকামুখী প্রাইভেট কার ও চট্টগ্রামমুখী কনটেইনারবাহী লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। প্রাইভেট কারে ছিলেন সাইফুজ্জামান খান মিন্টু ও তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং ছেলেসহ মোট পাঁচজন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের টিম গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুই মেয়ের লাশ উদ্ধার করেন। আহত তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিন্টু মারা যান।
শনিবার বিকেলেই আহত মা ও ছেলেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে নিহত তিনজনের লাশ চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের সন্তান জেড আই সাইফুজ্জামান খান মিন্টু (৪৫)। পরিবারে ছয় ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে মিন্টু দশম। স্ত্রী কণিকা জামান খান (৩৯) গৃহিণী। বড় মেয়ে আশরা জামান খান (১৩) ফেনী ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। মেঝ মেয়ে তাসনিম জামান খান (১১) ও ছেলে মন্টি খান (১০) ঢাকার একটি স্কুলের চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত সাইফুজ্জামান খান মিন্টু পরিবার নিয়ে থাকতেন মিরপুর এলাকায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে যোগ দিয়েছিলেন সাইফুজ্জামান। মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ফেনী ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে তাকে নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বান্দরবানে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। গত ২৩ ডিসেম্বর তারা বান্দরবানে যান। ফেরার পথে নিজেই প্রাইভেট কার চালিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে লরির সঙ্গে প্রাইভেটকারের দুর্ঘটনায় দুই মেয়েসহ মারা যান তিনি।