Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এমন দুর্নীতির বাজে প্রভাব সমাজে সংক্রমিত হয়’


১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২৩:০৬

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরস্পর যোগসাজসে এতিমের টাকা আত্মসাতের মতো দুর্নীতি রাষ্ট্রের  অর্থনৈতিক স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে।একইসাথে এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটাই উল্লেখ করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।

সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের ১২ দিনের মাথায় সার্টিফায়েড কপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

এই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী টাকার পরিমাণ বেশি না দেখালেও আত্মসাতের সময় ওই টাকার মূল্য ছিল অনেক বেশি। ৬৩২ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া ওই সময় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আরেক আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী সরকারি কর্মচারী হয়েও আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলের ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করেন ।

আসামি তারেক রহমান, মমিনুর রহমান ও শরফুদ্দিন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি তহবিলের টাকা একে-অপরের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। এর মাধ্যমে এই মামলার ছয় আসামির প্রত্যেকেই কোনো না-কোনোভাবে লাভবান হয়েছেন বলেও আদালত মনে করেন।

এসব অপরাধ দুটি ধারায় প্রমাণিত হলেও একটি ধারায় দণ্ড সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী সরকারি এতিম তহবিলের টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুইটি ট্রাস্টে হস্তান্তর করেন যার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

ওই ট্রাস্টে ১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকা স্থানান্তরের পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সেখানে জমা হয়। আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান ট্রাস্টের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করে প্রথমে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কেনেন। অবশিষ্ট টাকা প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে কাজী সালিমুল হক কামাল ও গিয়াস উদ্দিনের হাত হয়ে আসামি শরফুদ্দিনের হাতে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা চলে যায় এবং তা আত্মসাৎ করা হয়। এগুলো সবই আসামিদের ‘মিনস রিয়ো’ ইঙ্গিত করে।

ফলে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (১) ধারায় বর্ণিত ক্রিমিনাল মিসকনডাক্ট এর উপাদান যেমন এই মামলায় উপস্থিত আছে, ঠিক তেমনি আসামিদের মিনস রিয়োসহ রংফুল গেইন এর উদ্দেশ্যে বর্ণিত পরিমাণ টাকা বিভিন্ন পন্থায় রূপান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও আদালত মনে করেন। খালেদা জিয়া এ মামলায় আত্মপক্ষ শুনানিতে বক্তব্য প্রদানের সময় নিজ জবানীতে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। ফলে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় তাকে শাস্তি দিতে কোনো বাধা নেই। আদালত মনে করেন, আসামিরা একে-অপরের সহায়তায় যেভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার একটি প্রিসামটিভ ভ্যালু রয়েছে যা এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

রায়ে আরও বলা হয়, আসামিদের মধ্যে একজন ব্যতীত অপর সবাই সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাৎ করেন।

সকল আসামি সরকারি কর্মচারী এবং মার্চেন্ট কিভাবে হলো এ সম্পর্কে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান পর্যালোচনায় লক্ষ্য করা যায় যে, এই ধারায় কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে তাকে সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার, মার্চেন্ট বা এজেন্ট হতে হবে। এই মামলায় আসামি খালেদা জিয়া এবং কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল ঘটনার সময় জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। জাতীয় সংসদ সদস্য বিদ্যমান আইন অনুসারে সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। এছাড়া আসামি তারেক রহমান এবং মমিনুর রহমান প্রাইভেট ট্রাস্ট এবং ট্রাস্টি হলেও বাংলাদেশ  সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুসারে ট্রাস্টিরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হন। আসামি শরফুদ্দীন  আহমেদ মার্চেন্ট বা এজেন্ট হিসাবে গণ্য হন। ফলে তাদের সকলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান প্রয়োগ যোগ্য হবে বলে এই আদালত মনে করেন।

বিজ্ঞাপন

রায়ে ৫ ও ১০ বছর দণ্ড প্রদানের বিষয়ে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ড যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। আসামিরা  একে-অপরের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন এবং সে কারণে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা প্রয়োজন। তবে আসামিদের বয়স ও সামাজিক অবস্থা এবং আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা সমিচীন হবে না বলেও আদালত মনে করেন।

আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়া এদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তাছাড়া তিনি একটি রাজনৈতিক দলের কর্ণধার। তিনি একজন বয়স্ক নারী। ফলে তার শরীরিক অবস্থা, বয়স এবং সামাজিক পরিচয় বিবেচনা করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারায় তাঁর ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা সমিচীন বলে মনে হয়। বাকি ৫ আসামিকে তাদের বয়স ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া উচিৎ বলে  আদালত মনে করেন।

রায়ের আদেশে সকল আসামিকে দণ্ডের পাশাপাশি ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা অর্থদণ্ড ও উক্ত অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যা ৬০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রর অনুকূলে আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রস্টের জমাকৃত টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এআই/এজেডকে/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর