স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: রাজধানীর স্বনামধন্য হলিক্রস স্কুলের ভেতরে শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গিয়ে দেখা যায়, খেলার মাঠের চারিদিকে কেবল প্ল্যকার্ড ঝুলছে। যা স্কুলের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের হাতে লেখা শোভা পাচ্ছে। তারই একটি ছিল—‘বিপিএল’।
বিজ্ঞান মেলায় কী করে ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ’ এল তা জানতে গিয়ে পাওয়া গেল মজার তথ্য। আসলে এই বিপিএল অর্থ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নয়, বিপিএলের মানে ‘ব্রডব্যান্ড ওভার পাওয়ার লাইন’!
বিপিএল-এর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ১২ জন শিক্ষার্থী নতুন এই ‘বিপিএল তরিকা’ নিয়ে অংশগ্রহণ করছে বিজ্ঞান মেলায়। আর তাদের প্রজেক্টটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের শিক্ষক ও দর্শনার্থীদের কাছে প্রচণ্ড আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এই বিপিএল সর্ম্পকে ধারণা দিচ্ছে প্রজেক্টের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, এই প্রজেক্টটি সপ্তম শ্রেণির ক শাখার শিক্ষার্থীদের এবং তাদের দলনেতা অপরাজিতা নীল রোদেলা। ওই দলে রয়েছে— রোদশী রুদাইবা, তাসনিম সুলতান, আদিবা বিনতে সালাম, নুজহাত তামান্না, অন্তরীক্ষা রায়, সুলগ্না ধর, সুনন্দা সোম, দীপান্বতা মজুমদার, তাসফিয়া তাসকিন, সানজানা চৌধুরী ও আস্থা রোজারিও।
দলনেতা অপরাজিতা নীল রোদেলা বলল, ‘প্রজেক্টটি স্কুলের শিক্ষিকা শারমিনা ইয়াসমিন, দীবা দাস ও হাবিবা সুলতানার সার্বিক সহায়তা ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না।’
হাতের কাছে থাকা কয়েকটি উপকরণ দিয়েই এই প্রজেক্টের বাস্তবায়ন সম্ভব জানিয়ে অপরাজিতা নীল রোদেলা সারাবাংলাকে বলে, ‘একটা তারের মধ্যে দিয়ে একইসঙ্গে একটা উচ্চ ও একটা নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট প্রবাহিত করা হয়েছে। এর জন্য একটি রাউটার, মডেম, দুটো অ্যাডাপ্টার, মাল্টিপ্লাগ, মাইক্রোকন্ট্রোলার আর দুইটা পানির পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে— আর কিছু না।’
রোদেলা আরও বলল, ‘এই বিপিএল এক সম্ভাবনার দরোজা খুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আনা যাবে। সাধারণত ইন্টারনেট প্রোভাইড করার জন্য আমাদের অবকাঠামো দরকার হয়। কিন্তু এই প্রজেক্ট কেবলমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহার করে । অর্থাৎ ইলেক্ট্রিসিটি তারের মধ্য দিয়েই ইন্টারনেট— দুটো ফ্রিকোয়েন্সিই একসঙ্গে পাওয়া যাবে।’
‘আমরা সাধারণ বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহার করে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্ত করতে পারব, পৃথক পৃথক যন্ত্রপাতিক সংযুক্ত করার দরকার হবে না বলে দলের আরেক সদস্য আস্থা রোজারিও। কেবল তাই নয়, অফিসের কম্পিউটার ওয়েব ব্রাউজার থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বাড়ির রান্না ঘরে থাকা রাইস কুকার, মোবাইল ওয়েব ব্রাউজার থেকে অন বা অফ করা যাবে ঘরের লাইট, ফ্যান বা টেলিভিশন।’ —বলল সে।
অপরাজিতা নীল রোদেলা শেষে যোগ করল, ‘ব্যয় বহুল টেলিফোন লাইন ব্রডব্যান্ডের তুলনায় বিপিএল অনেক দ্রুত, সহজ, এবং সস্তা প্রযুক্তি যা সহজেই বহুদূরের পল্লী এলাকাতে পৌঁছানো সম্ভব। তারচেয়েও বড় কথা, ব্রডব্যান্ড ওভার পাওয়ার লাইন একটি সহজ এবং সাধারণ প্রযুক্তি।’
বৃহষ্পতি শুরু হওয়া ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের তিনদিনের এই বিজ্ঞান মেলা শনিবার শেষ হয়। আর মেলার শেষ দিনে বিপিএল প্রজেক্টটি জয় করেছে জুড়ি বোর্ডের পুরস্কারও।
সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে