বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন সকালে, এখনো শেষ হয়নি প্রস্তুতির কাজ
৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩৮
ঢাকা: উদ্বোধনের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার (ডিআইটিএফ) ২৫তম আসর। রাত পেরোলেই শুরু হবে মাসব্যাপী এই আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন এ মেলার। তবে উদ্বোধনের ১২ ঘণ্টারও কম সময় বাকি থাকলেও এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ। মেলার অধিকাংশ স্টলই গুছিয়ে উঠতে পারেনি। মেলার প্রধান গেটের কাজও শেষ হয়নি। শেষ মুহূর্তে এসে তাই মেলা প্রাঙ্গণে শ্রমিকরা দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। স্টল মালিকরা বলছেন, স্টল বরাদ্দের পর পর তারা যেটুকু সময় পেয়েছেন, তা স্টল তৈরির জন্য পর্যাপ্ত নয়। তবে আয়োজক কর্তৃপক্ষ বলছে, স্টল তৈরির জন্য মালিকদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেলার উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা আগেও অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নেই শেষ হয়নি কাজ। এখনো বেশকিছু স্টল-প্যাভিলিয়নে চলছে ডেকোরেশন, অয়েলিং, লাইটিং, ফ্লোরিং ও সিলিংয়ের কাজ। আবার কিছু কিছু স্টলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে রঙের কাজ। এমনকি মেলার প্রধান গেটও এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিককে গেটটির রঙ করাসহ বিভিন্ন কাজ করতে দেখা গেছে।
এদিকে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারে মেলার বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন বিশেষভাবে সাজানোর কথা রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে এই স্টলে। জানা গেছে, কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী প্যাভেলিয়নটি ঘুরে দেখবেন। কিন্তু মেলার এই প্রধান আকর্ষণটির কাজও এখনো শেষ হয়নি।
একটি প্যাভিলিয়নের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাত্র ২০ দিন আগে স্টল বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করতে পেরেছি। আমাদের প্যাভিলিয়নটি তিন তলা। এই অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারিনি। যদিও কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে, রঙ আর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ বাকি আছে। চেষ্টা করছি রাতের মধ্যে কাজ শেষ করতে।
জানতে চাইলে অন্য একটি প্যাভিলিয়নের ম্যানেজার সারাবাংলাকে বলেন, এখনো অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু কাল উদ্বোধনের পর থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হবে। ওই সময়ও দেখা যাবে অনেক স্টলেই কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলা শুরুর প্রাক্কালেও প্যাভিলিয়ন বা স্টলের কাজ শেষ করতে না পারাটা নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিবছরই মেলা শুরুর পর এক সপ্তাহ ধরে স্টলগুলো কাজ শেষ করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্টল ও প্যাভিলিয়ন মালিকদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
জানতে চাইলে মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, যথাসময়েই স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দের নিয়মানুযায়ী মেলার উদ্বোধনের আগেই তাদের কাজ শেষ করতে হবে। আশা করছি তারা আজকের মধ্যেই কাজ শেষ করবেন।
মেলার প্রধান গেটসহ বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাজ প্রায় শেষ। আজ রাতের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে, এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের দাম গত বছরের চেয়ে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ বছর প্রাপ্তবয়স্কদের টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ৪০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য ২০ টাকাই রয়েছে।
টিকিটের দাম বাড়ানো নিয়েও অবশ্য আপত্তি আছে স্টল সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে যেতে পারে।
ডাইজনিং ইতালি প্যাভেলিয়নের একজন সেলসম্যান রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, এবার টিকেটের দাম বাড়িয়েছে। এতে মনে হচ্ছে কাস্টমারের সংখ্যা কমবে। কারণ বেশি টাকা খরচ করে মেলায় ডুকতে চাইবে না অনেকেই। আমরা মনে করি, টিকিটের দাম যত কম হবে, কাস্টমারও তত বেশি মেলায় আসবে। আর এতে বিক্রিও বাড়বে।
তবে দোকান মালিকদের শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিকেলে মেলা প্রঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এবার মেলায় স্টলের সংখ্যা কমিয়ে পরিবেশ সুন্দর করা হয়েছে। আবার টয়লেট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নানা উপযোগিতাও বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে টিকিটের দাম একটু বাড়ানো হয়েছে। একটু ভালো কিছু আশা করলে সেখানে খরচও একটু বেশি করতে হয়। মন্ত্রীর আশা, ক্রেতা বা দর্শনার্থীরা বিষয়টি বুঝবেন।