Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঐক্যফ্রন্টে নতুন মেরুকরণ: মান্নার প্ল্যাটফর্ম, জানেন না ফখরুল


৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:০৫

ঢাকা: ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন মাহমুদুর রহমান মান্না। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সদ্যপ্রয়াত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে ফোনালাপের জেরে কারাবন্দি হন তিনি। সেদিন থেকেই বিএনপির আপনজন হয়ে ওঠেন মান্না। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপির আরও কাছে আসেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক।

বিজ্ঞাপন

ডাকাসুর সাবেক এই ভিপি গত একবছরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে অসংখ্যবার খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন। বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে নিজের সাবেক দল আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু যে ভোটকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্ম, সেই ভোটের বর্ষপূতির দিন সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) জোটের প্রধান শরিক বিএনপিকে না জানিয়ে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না!

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- মৎস ভবনের সামনে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলনে’র সমাবেশ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার এই নতুন প্ল্যাটফর্ম মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন মেরুকরণ। যে পাঁচটি দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, মান্নার ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ মঞ্চে তাদের তিনটিই ছিল অনুপস্থিত। অবশ্য গণফোরামের একজন ও বিএনপির যে পাঁচ জন মধ্যম সারির নেতা মান্নার সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দলে কোনো না কোনোভাবে কোণঠাসা হয়ে আছেন। সম্প্রতি এলডিপির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে যে প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছিলেন, সেখানেও ডাক পেয়েছিলেন তারা।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ সমাবেশ কাভার করার অনুরোধ জানিয়ে যে প্রেস রিলিজ পাঠানো হয়, সেখানে প্যানেল বক্তার নামের তালিকায় আ স ম আবদুর রবের পাশাপাশি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আরেক শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহম্মদ ইবরাহিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হকের নাম থাকলেও বিএনপি ও গণফোরামের কারও নাম ছিল না।

সোমবার রাতে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এটা কে গঠন করেছে? তারা কোথায় প্রোগ্রাম করেছে?’

পরে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’-এর উদ্যোক্তার নাম এবং প্রোগ্রামের স্থান সম্পর্কে অবহিত করলে মির্জা ফখরুল আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এখানে কে গেছেন, কারা কারা ছিলেন— কিছুই আমি জানি না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহমুদুর রহমান মান্নার ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলনে’ আ স ম আবদুর রবও আসতে চাননি। ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দুই দল বিএনপি এবং গণফোরামকে পাশ কাটিয়ে নতুন আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিতে চাচ্ছিললেন না আ স ম রব। সে কারণে সোমবার সকালে মান্নাকে ফোন করে জানিয়ে দেন, সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছেন তিনি। তার পক্ষে সমাবেশে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু মান্নার পিড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত সমাবেশে আসেন রব।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে পাশ কাটিয়ে আরেকটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের পেছনে বেশ কয়েকটি ইস্যু কাজ করেছে বলে জানা গেছে। ইদানিং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে আসেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সবশেষ ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়েও আসেননি তিনি। আর নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আসা বাদ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদ।

সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানার ব্যবহার করে গণফোরামের দু’জনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া, নির্বাচনের পর পরই একে একে বিএনপি নেতাদের সরে যাওয়া এবং জোট থেকে বঙ্গবীরের বিদায় নিয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। সে কারণে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি শরিক দল এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরব থাকা বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর কথা ভাবছিলেন মান্না। আর সেটির জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেন ভোটের বর্ষপূর্তির দিনটিকে।

জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না সারাবাংলাকে বলেন, “আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন গত একবছরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিছুই করতে পারেনি। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আমি ডিনাই করছি না। শুধু চেষ্টা করছি, নতুন কিছু করা যায় কি না।’

আর আপনারা ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’কে নতুন রাজনৈতিক জোট, প্ল্যাটফর্মসহ আরও যা যা বলছেন এবং আমাকে এর আহ্বায়ক, সমন্বয়ক বলছেন— আসলে এসব কিছু না। সরকারের বিরুদ্ধে সবাই কথা বলতে চায়। কিন্তু কথাটা বলবে কোথায় দাঁড়িয়ে? তাই ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে একটা ব্যানার নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে আসিফ নজরুল, আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের মতো অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসে কথা বলেছেন,”— বলেন মান্না।

এদিকে বামগণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে পুলিশের বাধা এবং বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশে অনুমতি না দিয়ে মান্নাকে সমাবেশ করতে দেওয়ায় নানা মহলে নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করছেন, সরকারের বিশেষ মহলের সঙ্গে সমঝোতা করেই মান্না মাঠে নেমেছেন। শুধু তাই নয়, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানরের আমীর নূর হোসেন কাসেমী কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে মান্নার সমাবেশে যোগ দেওয়ায় সন্দেহ আরও বেড়েছে।

তবে এ সম্পর্কে মাহমুদুর রহমান মান্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা হেফাজতে ইসলামকে দাওয়াত করে আনিনি। নূর হোসেন কাসেমী সাহেব কর্মী-সমর্থকসহ এসেছেন, তাকে আমরা অনার করেছি।’

সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নার নিজের একটা দল ‘নাগরিক ঐক্য’ আছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেরও তিনি একজন শীর্ষ নেতা। এরপরও যদি আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বা জোটের প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেন, সেটা তো করতেই পারেন। শুধু এইটুকু বলব, এই প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।”

গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন গণফোরাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জেএসডি নাগরিক ঐক্য বিএনপি মাহমুদুর রহমান মান্না

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর