Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেসবুকে পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা, ৩ হোতা গ্রেফতার


১ জানুয়ারি ২০২০ ২১:৫০

ঢাকা: চায়না ফ্যাশন, বাই অ্যান্ড সেল, ফ্যাশন হাব, ট্রেন্ডি শপ, লাইফস্টাইল, প্রিমিয়াম কালেকশন, সিএম ফ্যাশন— এমন বাহারি নামে ফেসবুকে পেজ খুলতেন তারা। মোবাইল ফোন, বিছানার চাদর, ব্লেজারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আকর্ষণীয় দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন থাকত এসব পেজে। ক্রেতারা পণ্য পছন্দ করে অর্ডার দিতে চাইলে বিকাশের মাধ্যমে নেওয়া হতো বুকিং মানি। পণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কৌশলে কুরিয়ার সার্ভিস থেকে পণ্য তুলে নিতে অনুরোধ করা হতো অফিস থেকে। সেখান থেকে পণ্য নিতেই ক্রেতারা দেখতে পেতেন, সরবরাহ করা পণ্যটি অত্যন্ত নিম্নমানের, নকল বা ভুয়া।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করার নামে প্রায় একবছর ধরে একটি চক্র এভাবেই প্রতারিত করে আসছে হাজার হাজার ক্রেতাকে। এভাবে তাদের কাছ থেকে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত চক্রটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের জালে ধরা পড়েছে এই চক্রের তিন মূল হোতা।

বুধবার (১ জানুয়ারি) সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ট্রাফিকিং হিউম্যান বিয়িং বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন এসব তথ্য। চক্রের গ্রেফতার তিন সদস্য হলেন— কিশোরগঞ্জের মো. রেদওয়ান উল্লাহ, ভোলার আরিফ হোসেন ও সিরাজগঞ্জের জসিম উদ্দিন।

পুলিশ সুপার নাসির বলেন, এই চক্রটি গত একবছর ধরে অনলাইনে শপিংয়ে মানুষের আগ্রহকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফেসবুক পেজে কারও পণ্য পছন্দ হলে তাদের দেওয়া নম্বরে ফোন করলে প্রথমে পণ্যটি নিতে হলে বুকিং মানি হিসাবে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে বলা হতো। টাকার অঙ্কটি খুব বেশি না হওয়ায় ক্রেতারাও সেই টাকা বিকাশ করে পাঠাতেন। নামসর্বস্ব ফেসবুক পেজগুলোর জন্য তাদের বিকাশ নম্বর রয়েছে এক হাজারেও বেশি। আর তাদের কল সেন্টারের নম্বরটি ফরোয়ার্ড করা থাকে। ফলে বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেও ধরা যাচ্ছিল না।

প্রতারণার বিস্তারিত প্রক্রিয়া তুলে ধরে সিআইডি’র এই বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ক্রেতার কাছ থেকে বুকিং মানি পাওয়ার পর তারা ক্রেতাকে জানাত, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যটি তার নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। আর এখানেই প্রতারণার সবচেয়ে বড় আশ্রয় নেয় চক্রটি। তারা ক্রেতার নির্ধারিত ঠিকানায় পণ্য না পাঠিয়ে নিকটস্থ কোনো কুরিয়ার সার্ভিসে পণ্যটি পাঠাত। সেক্ষেত্রে নিজের ঠিকানা ব্যবহার করত ভুয়া। এরপর ক্রেতাকে ফোন করে ডেলিভারি সার্ভিস ম্যানের অভাব অথবা অন্য কোনো সমস্যার কথা জানিয়ে কুরিয়ার থেকে নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে পণ্যটি তুলে নিতে বলত। ক্রেতা সরল বিশ্বাসে টাকা জমা দিয়ে পণ্যটি তুলে দেখত সেটি তার অর্ডার করা পণ্য নয়। বিছানার চাদর অর্ডার করলে পাওয়া যেত গজ কাপড়, নতুন ব্লেজার অর্ডারের বিপরীতে মিলত পুরনো ব্লেজার, এমনকি মোবাইল ফোনের অর্ডার করলে মিলত ডামি ফোন!

বিজ্ঞাপন

এমন পণ্য পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতা ক্ষুব্ধ হতো। কল সেন্টারে ফোন করে মিলত না কোনো সমাধান। কুরিয়ারে আসা স্লিপের ঠিকানা ভুয়া হওয়ায় সেখানে গিয়েও দেখা পাওয়া যেত না কারও। এভাবেই প্রতিদিন শত শত পণ্য বিক্রির নামে একবছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামে সিআইডি। একমাস ধরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাতে সিআইডি’র টিএইচবি ইউনিট এই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারের ১৫ তলায় অবস্থিত একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে। এই চক্রের কেন্দ্রে আরও অন্তত ১০ জন জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এদের ধরতে অভিযান চলছে।

সিআইডি’র এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতারকরা যেসব ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে টাকা কামিয়ে আসছিল, সেসব পেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের। পরবর্তী শুনানিতে তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

অনলাইন শপিং টপ নিউজ প্রতারক চক্র প্রতারণা ফেসবুকে পণ্য বিক্রি সিআইডি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর