Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এইচ১এন১ ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়ানোর আশঙ্কা নেই’


১ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:৫১

ঢাকা: একসময় প্রাণঘাতী ও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এইচ১এন১ ভাইরাস বা এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা এখন আর আগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেই। এটি এখন একটি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় রূপ নিয়েছে। ফলে এইচ১এন১ ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়ানোর আশঙ্কা নেই।

সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে কথাগুলো বলছিলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। শুধু তিনিই নন, সংশ্লিষ্ট অন্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন একই কথা।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমইউ) ভর্তি করা হয় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পিকে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, তিনি অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে দেশে একবার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ফলে বাপ্পীর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে— ফের কি হানা দিতে যাচ্ছে এই ভাইরাস?

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সারাবাংলাকে বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম রোগটি দেখা দেয়। তখন ব্যাপক হারে এর সংক্রমণ ঘটেছিল। তখন এ ধরনের ভাইরাসকে সোয়াইন ফ্লু বলা হতো। বিশ্বব্যাপী তখন এটি মহামারি আকারে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই রোগটি সচরাচর পাওয়া যায় না। ভাইরাসের নিয়ম হলো একবারের পর তা আর বিশেষ ভাইরাস হিসেবে থাকে না। ফলে পরে এই ভাইরাসটি সিজনাল ভাইরাস ও সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় রূপ নেয়। এইচ১এন১ ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, এই ভাইরাস এখন আর আগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এটি এখন একটি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় রূপ নিয়েছে। আর তাই এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আগে শূকর জাতীয় প্রাণী থেকে এর সংক্রমণ হতো। তবে এটি এখন মানবদেহ থেকেই অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়চ্ছে। আমাদের দেশে এখন এই ভাইরাসের চিকিৎসা আছে, আছে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনও।

কিভাবে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এইচ১এন১ ভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ। এ ভাইরাসটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ ধরনের রোগীর কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। রোগীর সঙ্গে করমর্দন করলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। জীবাণু যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য রোগীদের বাইরে না যাওয়াই ভালো। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।

ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পীকে বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউতে রাখা হয়, সেখানে নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা। বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে কামরুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পি এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত। এটি বাইরের দেশে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস হিসেবে পরিচিত। তবে এশিয়ার দেশগুলোতে এটি এভিয়েন ফ্লু হিসেবে পরিচিত। এক্ষেত্রে আমরা আইসিউতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি, যেন এটি আর ছড়াতে না পারে।

এইচ১এন১ ভাইরাস বা অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহিনা তাবাসসুমও সারাবাংলাকে বলেন, এটি এখন সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা। এর আগে একবার এই রোগ দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লেও এখন তেমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা নেই। মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের মৌসুমি রোগ বাড়তে থাকে। এর প্রায় সবগুলোই কোনো না কোনো ধরনের ফ্লু। এইচ১এন১-ও এখন তেমন একটি ফ্লু। দেশে এর ভালো চিকিৎসা আছে। এ ধরনের রোগীদের অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেও এই রোগের ভালো চিকিৎসা আছে।

বিএসএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, এই ভাইরাস এখন সাধারণ ভাইরাসে রূপ নিলেও বর্তমানে হাসপাতালে অতিরিক্ত সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যেন কোনোভাবেই এই ভাইরাস না ছড়াতে পারে। আক্রান্ত রোগীকে আইসোলশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সবকিছুই আলাদাভাবে ডিসপোজ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, র‌্যাশ, কাঁপুনি, বমি বমি ভাব ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে। জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি বা এর চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। সাধারণত দুয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এসব লক্ষণ স্থায়ী হয়। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অর্থাৎ শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি বা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের একটু সাবধানে থাকা প্রয়োজন।

এর আগে, বাংলাদেশে এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী পাওয়া যায় ২০০৯ সালের ১৮ জুন। যুক্তরাষ্ট্রফেরত এক তরুণের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। ওই বছরের ৩০ আগস্ট বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০০৯ সালে এইচ১এন১ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন ১৯ জন। এরপর বিভিন্ন সময় দুয়েকজন রোগী পাওয়া গেলেও তাদের কেউ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল না।

অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা আইইডিসিআর এইচ১এন১ ভাইরাস বিএসএমএমইউ সোয়াইন ফ্লু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর