‘ভাতা বন্ধ হলেও শেষযাত্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেন তো বাবা’
২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৬
ঠাকুরগাঁও: ‘অর্থের অভাবে চিকিৎসা হলো না বাবার। অভাব অনটনে অতি কষ্টে চলে গেলেন তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বিকৃতির কারণে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দিলেও শেষযাত্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেলেন তো বাবা’- এই বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আমাসু বর্মনের মেয়ে কাজলী রাণী।
দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে আমাসু বর্মন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ইউনিট কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর বলেন, ‘আমাসু বর্মন পাকহানারদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।’
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম বিকৃতির কারণে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়ে যায় আমাসু বর্মনের। অভাবের সংসার, শরীরও চলে না; এই চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আমাসু। নিরুপায় স্ত্রী বনমালা রাণী স্বামীর অসহায়ত্ব দেখে ক্ষেতে খামারে কাজ করে দু-মুঠো খাবার যোগাড় করলেও চিকিৎসার খরচ যোগাতে পারেননি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানান, আমাসু বর্মন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তার নম্বর ০৩১০০১০৪২৯। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম বিকৃতির কারণে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
আমাসু বর্মনের স্ত্রী বনমালা রাণী বলেন, ‘মোর স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে জটিল রোগে ভুগছিলেন। আজ হামাক ছেড়ে গেলেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারুনি বাহে।’
আমাসু বর্মনের ভাইয়ের ছেলে নিতাই চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাকার (চাচা) জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য অনেক দেন দরবার করেও ফল হয়নি। তিনি শেষে কালে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাসু বর্মনের নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও সেটা সংশোধিত হয়ে ফেরত আসেনি।’