‘পুলিশের মাঝে গুণগত একটি পরিবর্তন এসেছে’
৫ জানুয়ারি ২০২০ ১২:২৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ঠিক ব্যয় হিসাবে নিই না। আমরা মনে করি, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে এটা আমাদের এক ধরনের বিনিয়োগ।
রোববার (৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি পুলিশের মাঝে গুণগত একটি পরিবর্তন এসেছে। তারা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ১০বছরের উন্নয়নের অভিযাত্রায় পুলিশ বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। তাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপেই অত্যন্ত দক্ষতা, সাহসিকতা এবং পেশাদারিত্ব আমরা দেখেছি।
৫ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ শুরু
বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, তাদের এই সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ পুলিশ প্রতিরোধ করেছে, জনগণ তাদের পাশে ছিল। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার মতো এই ধরনের জঘন্য কাজ আর দেশের জাতীয় সম্পদগুলি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করার কাজ তারা করেছে। দেশকে একটা অচল অবস্থার দিকে নেবার তাদের পরিকল্পনা ছিল। সেই সময় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে আপনারা দেশের মানুষকে এবং জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করেছেন।
পুলিশ সপ্তাহে ৭১৩ জনকে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
এজন্য পুলিশবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশ থেকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি দূর করবো। তার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাবে। আজ দেশে-বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। এই বিনিয়োগ যেন কোনমতে ব্যহত না হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবক হচ্ছে পুলিশ। যেটা জাতির পিতা বলে গেছেন। জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫জানুয়ারি এই রাজারবাগে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি কিন্তু এই পুলিশ বাহিনীর অনেক প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে রাজারবাগ এবং পুলিশের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরাও তা মনে করি। পুলিশের অবদান সবসময় আমাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের যে আস্থা বিশ্বাস অর্জন করা, এটা পুলিশ বাহিনী আজকে করেছে। এখন ‘৯৯৯’ টেলিফোন করলে যেকোন সমস্যায় মানুষ পড়লে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় এবং তাদের সেই সমস্যা থেকে মুক্ত করে।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করে দিয়েছে। এই সমস্ত গুজব রটনা করে মানুষের ক্ষতিসাধন যারা করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাাশি পুলিশের জনবল ধাপে ধাপে বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস নির্মূলে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টিার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিসিসি) গঠন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের পুলিশ শুধু দেশে না, এখন জাতিসংঘেও পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা সেখানে অবদান রাখছে। তাই পুলিশের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। যেন আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের পুলিশ বাহিনী চলতে পারে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আমাদের নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের ট্রেনিংয়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেবো। ট্রেনিং সেন্টার খোলার চিন্তাভাবনা আমাদের রয়েছে।
পুলিশের কল্যাণে রেশনব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, তখন দেখেছিলাম মাত্র ২০ শতাংশ পুলিশ রেশন পেত। এখন আমরা পূর্ণাঙ্গ রেশন সকলের জন্য দিয়ে দিচ্ছি। আর যারা অবসরপ্রাপ্ত, তাদের আজীবন রেশনের ব্যবস্থাও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে, আমরা সেটাও ব্যবস্থা করে দেবো। তাছাড়া আমি সকলের বেতনভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছি।
পুলিশের আবাসন সংকট দূর, যানবাহনসহ অবকাঠামোগত উন্নত করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলাতে বরাদ্দকৃত অর্থকে আমরা ঠিক ব্যয় হিসাবে নিই না। আমরা মনে করি, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যানে এটা আমাদের এক ধরনের বিনিয়োগ। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক সাজে সজ্জিত করে এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। যেন জনগণের সেবা তারা নিশ্চিত করতে পারে।
তিনি বলেন, ২০২০ আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাল। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। ২০২১ সালের ২৬মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। আমরা ২০২০সালের ১৭মার্চ থেকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আামদের লক্ষ্য, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ সারাবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে।
জাতির পিতার এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে উল্লেখ করে রাজধানীর রাজারবাগে বর্ণাঢ্য পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি।