Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মারধরের দায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড, সাজা খাটবেন বাড়িতে!


৬ জানুয়ারি ২০২০ ০০:১৫

খাগড়াছড়ি: প্রতিবেশীকে মারধর করে মামলার আসামি হয়েছিলেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার লাম্বাছড়া গ্রামের আবদুস সামাদ। মামলার তদন্তে তাকে অভিযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল চার্জশিট। সাক্ষ্য-প্রমাণ, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর এসেছে সেই মামলার রায়। তাতে আসামিকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে আসামিকে যেতে হয়নি কারাগারে। সমাজসেবা অধিদফতরের ‘প্রি-সেন্টেন্স’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’-এর আওতায় তাকে পাঠানো হয়েছে তার নিজের বাড়িতে। সাজার ছয় মাস তিনি কাটাবেন এখানেই, তবে মানতে হবে ১১ শর্ত।

বিজ্ঞাপন

ব্যতিক্রমধর্মী এই রায় এখন খাগড়াছড়িতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, বিরল হলেও এই কোনোভাবেই আইনের ব্যত্যয় নয়। বরং কারাগারে গিয়ে অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থেকে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আদালতের দেওয়া শর্ত মেনে নিজেকে সংশোধন করে নিতে পারবেন।

গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) খাগড়াছড়িতে এ রায়ের নজির গড়েছেন জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম আদালত) মো. সামিউল আলম। রায়ের বিষয়টি জানাজানি রয়েছে রোববার (৫ জানুয়ারি)।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি লাম্বাছড়া গ্রামের আবদুর রহমান মিয়াকে মারধর করেছিলেন একই এলাকার আবদুস সামাদ। এ ঘটনায় সামাদকে আসামি করে একই বছরের ১ মার্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন আবদুর রহমান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহীন হোসেন জানান, প্রায় আট মাস পর ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মামলায় সাক্ষ্য দেন ছয় জন। একবছরেরও বেশি সময় পরে সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর আসামি আবদুস সামাদকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম।

অ্যাডভোকেট শাহীন আরও জানান, আসামিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিলেও বিচারক তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে কারাদণ্ড স্থগিত রেখে সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে ‘প্রি-সেন্টেন্স রিপোর্ট’ তলব করেন। পরে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা কৃতি বিজয় চাকমা গত ২ জানুয়ারি আসামি মো. আবদুস সামাদের অপরাধ ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০’-এর ৪(১) ধারা অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় প্রবেশনযোগ্য মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদন গ্রহণ করে বিচারক কারাদণ্ডের ছয় মাস মেয়াদে আবদুস সামাদকে ১১ শর্ত মেনে বাড়িতেই থাকার নির্দেশনা দেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, এ ধরনের রায় খাগড়াছড়ি জেলায় প্রথম। রায়টি ব্যতিক্রমী, কিন্তু আইনানুগ।

তিনি বলেন, খুব একটা প্রয়োগ না হলেও প্রবেশন অর্ডিন্যান্স আগে থেকেই আছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে প্রবেশন সংক্রান্ত একটি সার্কুলারও জারি করা হয়। জে-০১/২০১৯ নম্বর সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করেই এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় আইনজীবীরা। খাগড়াছড়ি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারক কেবল প্রবেশন সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনাই অনুসরণ করেননি, তিনি আইনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে একজন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জেলখানায় ঘৃণ্য অপরাধীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রেখে ভবিষ্যতে আরও বড় অপরাধে জড়িত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। যারা এর আগে কখনো দণ্ডপ্রাপ্ত হননি বা প্রথম অপরাধে একবছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেয়েছেন, এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে তারা বড় অপরাধ থেকে বা অপরাধীর সংস্পর্শে আসা থেকে বেঁচে যাবেন। এতে করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমবে বলে আমরা মনে করি।

কী আছেদ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্সে

দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০-এর ৪ ধারায় বলা আছে, যারা এর আগে কখনো দণ্ড পেয়েছে বলে প্রমাণিত নয় কিংবা দুই বছরের বেশি মেয়াদে কখনো দণ্ড পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে প্রবেশন ধারাটি প্রযোজ্য হতে পারে। আসামির বয়স, চরিত্র, পূর্ব ইতিহাস কিংবা শারীরিক অথবা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরণ বা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বিচারক এই ধারা প্রয়োগ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদে কারাগারে না থেকে মুক্তভাবেই বিচরণ করতে পারবেন আসামি। তবে এই মেয়াদের মধ্যে তিনি আর কোনো অপরাধ করতে পারবেন না এবং তাকে সদাচরণ করতে হবে। এছাড়াও বিচারক তাকে এই মেয়াদের জন্য বিভিন্ন শর্ত আরোপ করতে পারেন। শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে ফের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।

১৯৬০ সালের এই আইনটি কাগজে-কলমে থাকলেও এর প্রয়োগ ছিল না। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনটি কার্যকর করতে সারাদেশের বিচারকদের নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রে বলা হয়, প্রবেশন মঞ্জুর করার সময় সংশ্লিষ্ট বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই আইন অনুযায়ী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে আদালত তার যৌক্তিক কারণ লিখিত আকারে রাখবেন।

আইনজীবীরা বলছেন, অপরাধ করলে সাজা দেওয়া হলেও এর উদ্দেশ্য সংশোধনমূলক, প্রতিহিংসামূলক নয়। তাই অপরাধীর বয়স, আচরণ এবং শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে প্রবেশনের সুযোগ নেওয়া হলে অপরাধী কারাগারে গিয়ে অপরাধীদের সংস্পর্শে যেমন আসবে না, তেমনি সাজার মেয়াদে সদাচরণের শর্ত মেনে চললে তা তাকে সুনাগরিক হিসেবেও গড়ে তোলার সুযোগ করে দেবে।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর