সমাবর্তনের জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ
৬ জানুয়ারি ২০২০ ১১:২৮
ঢাকা: প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর আগামী ১১ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন। ২০০৫ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পর নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর সমাবর্তন দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমাবর্তনকে ঘিরে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উচ্ছসিত।
বহুল প্রতিক্ষিত এই সমাবর্তন পেতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছিলেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পরে বাধ্য হয়ে তৎকালীন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রশাসন ও একাডেমিক অ্যান্ড কাউন্সিল শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে সদস্য-সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করে। দ্রুত সমাবর্তনের স্থান, সময় ও পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়াদি নির্ধারণ করে ভিসি বরাবর সুপারিশ দিতে কমিটিকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য গত ১ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সমাবর্তনের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন শেষ করেন। সমাবর্তনকে সামনে রেখে ধূপখোলা মাঠে তৈরি হচ্ছে ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফিটের প্যান্ডেল। দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্যান্ডেলে নিয়োজিত কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে ভবন রং করাসহ আরও বিভিন্ন কাজ। কলা অনুষদে তৈরি করা হচ্ছে বড় স্টেজ।
ব্যস্ত সময় পার করছে সমাবর্তনের সাথে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের দফতর ও বিভাগগুলো। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও বিএনসিসি, রোভার স্কাউটদের প্রস্তুত করা হয়েছে।
সমাবর্তনে একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি সনদের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পেরেছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ডিগ্রি অর্জনকারীরা সমাবর্তনের পর ডিগ্রির সনদ তুলতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তনে স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, স্নাতকোত্তর ৪ হাজার ৮২৯, এমফিল ১১, পিএইচডি ছয় ও ইভিনিং প্রোগ্রামের ১৫৭৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এরমধ্যে ছেলে ১৩ হাজার ৭৬২ ও মেয়ে ৪ হাজার ৫৫৫ জন।
রেজিস্ট্রার দফতর থেকে জানানো হয়, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা ৭, ৮ ও ৯ জানুয়ারি অফিস চলাকালীন (সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা) সময়ে স্ব-স্ব বিভাগ হতে কস্টিউম, ব্যাগ ও গিফট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের দিন (১১ জানুয়ারি) বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত, ১২ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত স্ব-স্ব বিভাগ হতে মূল সনদ নেবেন। নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সনদ নিতে ব্যর্থ হলে, পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে মূল সনদ নেওয়া যাবে।
তবে, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া গাউন শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হচ্ছে না। ওইদিন শিক্ষার্থীদের প্রবেশের চাপ সামলাতে সকাল ৮টা থেকেই ভেন্যুতে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ।
১১ জানুয়ারী বেলা ১২টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হবে। আরও বক্তব্য দেবেন পদার্থ বিজ্ঞানে বাংলাদেশের একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুন কুমার বসাক।
সমাবর্তন ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিরাপত্তার জন্য মাঠে পুলিশ, এনএসআই, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষনিক থাকছে। ধুপখোলা মাঠে অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নিরাপত্তার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, সার্বক্ষনিক পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। সমাবর্তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি থাকবেন এজন্য আমাদের নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই।
সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এটি আমাদের প্রথম সমাবর্তন, তাই অভিজ্ঞতা নতুন। এরপর থেকে প্রতিবছর সমাবর্তন হবে। আমাদের সবগুলো কমিটি খুব ভালোভাবে কাজ করছে এবং আমাদের প্রস্তুতির কোন কমতি নেই। সকলের সহযোগীতায় একটা সফল সমাবর্তন দিতে পারবেন বলে আশা করেন।