Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পুরুষ এতটা পশু হলো কীভাবে?’


৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:২১

‘মানুষরূপী পশুদের লিঙ্গ কেটে ফেলা উচিত। যারা একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাদের এই অঙ্গ থাকাই উচিত না। জঙ্গলের পশুও প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সঙ্গী ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে মিলিত হতে চায় না। কিন্তু মানুষরূপী পশু প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পুরুষ এতটা পশু হলো কীভাবে? এর উত্তর অবশ্য আমার জানা নেই’-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ।

হাতে গোনা দুই একটি ধর্ষণের ঘটনার বিচার হয় উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘তাতে সমাজে তেমন প্রভাব পড়ে না। প্রত্যেকটি ধর্ষণের ঘটনার বিচার হওয়া উচিত। তা না হলে পরের প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবো না আমরা। এই পশুদের দায়সারা শাস্তি দিলে চলবে না। কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে এখন উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল থেকেই মানববন্ধন, সমাবেশ, অবরোধ, বিক্ষোভে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। অবিলম্বে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ জানাতে আসা এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাগুলো মানুষকে আতঙ্কিত করে। বিশেষ করে নারীরা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আরও চিন্তিত হয়ে পড়েন। আমার ব্যাচমেট যেখানে নিরাপদ না, আমিও সেখানে নিরাপদ না। প্রতিদিন রাত ৯টার দিকে টিউশনি শেষ করে হলে ফিরি। শাহবাগে বাস থেকে নামি। আমিও যে ধর্ষণের শিকার হবো না, এই নিশ্চয়তা আমাকে কে দেবে?’

‘ধর্ষণের পর ধর্ষিতা ভাইরাল হয়, ধর্ষক আড়ালেই থেকে যায়। আমরা চাই ধর্ষক ভাইরাল হোক। ধর্ষকের এমন শাস্তি হোক যাতে দ্বিতীয়বার কেউ ধর্ষণ করার সাহস না পায়’, যোগ করেন এই শিক্ষার্থী।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের সব ছাত্র সংগঠনই ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছে।  এছাড়া রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগেও ওই জায়গায় এক আদিবাসী নারীর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। জায়গাটিতে আলো কম থাকে, লোকজনও তেমন যাতায়াত করে না। এই ঘটনার ফলে অল্প বয়সেই মেয়েটির মধ্যে যে ট্রমা জন্মালো, সারাজীবনেও হয়তো তা দূর করা সম্ভব হবে না। তাই আর যেন কোনো মেয়ে এই ধরনের ঘটনার শিকার হতে না হয়, এজন্য রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দু-একটি ঘটনার বিচার হচ্ছে। তবে এটাই যথেষ্ট না।’

এই ঘটনার দায় রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় জানিয়ে প্রো-ভিসি অধ্যাপক নাসরীন আহমেদ বলেন, ‘বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেই অবস্থান করে। তারা ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে যায়। রাস্তায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারবে না। এই দায় রাষ্ট্রের। ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রকে সোচ্চার হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মেয়েটির শারীরিক, মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা ও তার পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটিই কেবল করতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানান, নির্যাতিত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা, আইনী সহায়তা ও পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মেয়েটির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে ভুক্তভোগীর পরিবার দুইটি মামলা করেছে।

শাহবাগে মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘এদেশে নারীরা চরম অনিরাপত্তায় থাকে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়, এমন নজিরও এদেশে আছে। এবার পুলিশ সপ্তাহ দিবসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। কিন্তু আমি মনে করি, পুলিশ জনগণের নয়, ক্ষমতাসীনদের টিকে রাখতে ভিন্নমতের লোকজনের ওপর দমন-পীড়ন করে ক্ষমতাসীনদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারতো তাহলে ছাত্ররা আজকে রাস্তা অবরোধ করতে আসত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্রোতের বিপরীতে এসে যদি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কাজ করলে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হতে হবেই। সেটা ভেবেই কাজ করতে হবে। সমাজে ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে বাড়ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চরমভাবে বিদ্যমান।’

কুর্মিটোলা ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণ ধর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সম্পর্কিত খবর