২০১৯ সালে কক্সবাজারে মাদক মামলা ২২৬০টি, গ্রেফতার ৩ হাজার
৭ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০৩
কক্সবাজার: পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে মাদক নির্মূলে গত এক বছরে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৩ হাজার ২১৩ জন। মাদক আইনে মামলা হয়েছে ২ হাজার ২৬০টি। এছাড়া বিভিন্ন সময় মাদক বিক্রেতাদের সাথে আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে অনেক মাদক কারবারী।
প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে বহু মাদক বিক্রেতা ছেড়েছে দেশ। এছাড়া অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে প্রায় ১০২ জন বড় মাদক বিক্রেতাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, প্রশাসন চায় ২০২০ সালে যেন আর কোনো মাদক বিক্রেতার জন্ম না হয়। যে কারণে প্রশাসনের অভিযানের পাশাপাশি দরকার সামাজিক আন্দোলন। যেই আন্দোলনের মাধ্যমে মাদকের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে কক্সবাজার।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য জানা যায়, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে গত একবছরে (১ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯) দায়ের করা মোট মামলার সংখ্যা ২ হাজার ২৬০টি এবং গ্রেফতার ৩ হাজার ২১৩ জন।
এর মধ্যে পুলিশের দায়ের করা মামলা হলো ১ হাজার ৬১৭টি, গ্রেফতার ২ হাজার ৩২৩ জন; র্যাবের মামলা ২১৭টি, গ্রেফতার ৩৪৭ জন; মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মামলা ২০৪টি, গ্রেফতার ২৬০ জন; বিজিবি’র দায়ের করা মামলা ১৯৩টি, গ্রেফতার ২০৭ জন; কোস্টগার্ডের মামলা ২১টি, গ্রেফতার ৫৭ জন ও অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মামলা ৮টি, গ্রেফতার ৯ জন।
দায়েরকৃত মামলা ও গ্রেফতারের পাশাপাশি গত একবছরে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৮ পিস, দেশি মদ ২৪ হাজার ৩৩০ লিটার, বিদেশি মদ ২৭৩ বোতল, হুইস্কি ৮৫৫ বোতল, বিয়ার ১ হাজার ৩৯৮ বোতল, ফেনসিডিল ৪৮৪ বোতল, গাঁজা প্রায় ৯১ কেজি, হেরোইন ১৬২ পুরিয়া, সীসা সাড়ে ১৩ কেজির বেশি। এছাড়া পুরো বছরে ২২টি জিডি‘র মূলে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইয়াবা পাওয়া গেছে ৯ লাখ ২ হাজার ৫৯৪ পিস, দেশি মদ ২৬ লিটার, হুইস্কি ৮১৩ বোতল, বিয়ার ১ হাজার ৩৯ বোতল ও গাঁজা প্রায় ৮ কেজি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন জানান, মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কক্সবাজার অনেকটা সফল হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রশাসন বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। প্রথমেই শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়েছিল নিজেদের মধ্যে। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেক আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের হয় জেল হয়েছে, নয়ত দেশান্তর, নতুবা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা কারাগারে থাকা ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার আসামির মধ্যে ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ আসামি রয়েছে শুধু মাত্র মাদকের। এটিও প্রশাসনের একটি সফলতা।’
মাদকের বিরুদ্ধে এখন দরকার সামাজিক আন্দোলন উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘যেই আন্দোলনে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সচেতন মহল, সাধারণ জনগণ, ছাত্র-শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার লোক যুক্ত থাকবে। নিজ নিজ পরিবার থেকে আওয়াজ তুলতে হবে, যেন তাদের পরিবারের কেউ মাদকসেবন বা মাদকের সাথে জড়িত না থাকে।’ এরই মাধ্যমে মাদকের গ্লানি থেকে কক্সবাজার রেহাই পাবে বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।