Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইভিএমে সংঘাতের শঙ্কা নেই, কমছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা


৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা থাকলেও অতীতের নজির ভেঙ্গে ১৩ জানুয়ারির চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে কমানো হচ্ছে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার যুক্তি, যেহেতু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হবে, তাই সংঘাতের কোনো শঙ্কা নেই। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও যৌক্তিকভাবে কমানো হবে।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিইসি।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিকভাবে রাখা হবে, অতিরিক্ত রাখা হবে না। আগের চেয়ে কমানো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকগুলো স্তর থাকে। কিছু থাকে কেন্দ্রে। কিছু থাকে স্ট্রাইকিং ফোর্স। কিছু থাকে মোবাইল ফোর্স। র‌্যাব থাকে, বিজিবি থাকে, ব্যাটালিয়ন আনসার থাকে, পুলিশ থাকে।’

‘বিজিবি থেকে বলা হয়েছে, যত রিকুইজিশন দেওয়া হয়েছে, অত সংখ্যকের দরকার নেই, কমানো হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে কমানো হবে। সংখ্যার দিক থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে তারা এখানে বসে নির্ধারণ করবেন, কমানো কিভাবে যায়। অবশ্যই কমানো হবে।’

ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই-কারচুপির কোনো সুযোগ না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও কমানোর পক্ষে মত সিইসির।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, কারচুপি যাতে না হয়, ব্যালট ছিনতাই না হয় এবং যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তাদের পরিশ্রম যাতে লাঘব হয়, সেই চিন্তা করেই আমরা ইভিএম করেছি। ইভিএমের মাধ্যমে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবেন না, একবার একজন ভোট দিলে তিনি দ্বিতীয়বার দিতে পারবেন না।’

উপ-নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে এক্ষেত্রেও ইভিএম’র ওপরই নির্ভর করছেন সিইসি। ইভিএম নিয়ে আপত্তির কোনো কারণ নেই বলেও মনে করছেন তিনি।

‘ইভিএমে আপত্তির কোনো কারণ নেই। আমরা বলছি যে, ইভিএমই একমাত্র উপায় যেখানে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। অন্য কোনো কেন্দ্রের লোক এসে এখানে ভোট দিতে পারবে না। একবার ভোট দিলে সে আবার ভোট দিতে পারবে না। ইভিএমের মাধ্যমে এগুলো নিশ্চিত করে আমরা অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠু করব।’

সিইসি বলেন, ‘ইভিএম হলে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। এটা যদি চালু থাকে, তাহলে একসময় নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অভিযোগও আসবে না। ৮৬ সালে আমরা দেখেছি, নির্বাচন হওয়ার পর একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হল, রাতে টেলিভিশনে আরেকজনকে ঘোষণা করা হল, পরদিন গেজেটে দেখা গেল আবার আরেকজনের নাম। নির্বাচনি সংস্কৃতি নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আমরা যদি ইভিএম চালু করতে পারি, এই সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’

ইভিএমে ২৫ শতাংশ ভোট প্রিজাইডিং অফিসারের দেওয়ার সুযোগ আছে, এমন আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা হল একবার চাঁদে ছবি দেখার গুজব ছড়ানো হয়েছিল, সেটার মতো। ইভিএম পরিচালনার যে বিধি, তার কোথাও ১ শতাংশ, ২ শতাংশ, ৪ শতাংশ কিংবা ২৫ শতাংশের কথা উল্লেখ নেই। এসব কথার কোনো ভিত্তিই নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, আপনারা বিধিটা দেখেন, সেখানে এরকম কিছু লেখাই নেই। অনেক অভিযোগ আসে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই, তারপরও অভিযোগ আমাদের শুনতে হয়।’

প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যাবে না। অভিযোগ তো করতেই পারে। অভিযোগের ভিত্তি আছে কি না দেখতে হবে।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো কমিশন খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান সিইসি।

কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ভোটার কম হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে। যদি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, নির্বাচনে যদি সব দল অংশগ্রহণ না করে, প্রতিযোগিতা না হয় তখন ভোটার সংখ্যা কম হয়। যেমন- বিএনপি একটা বড় দল, তারা যদি অংশগ্রহণ না করে তাহলে ভোটার সংখ্যা কম হয়। বিগত নির্বাচনে যেখানে প্রতিযোগিতা হয়েছে, সেখানে ৭১ শতাংশ, ৬৯ শতাংশ, ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। যখন বড় দল অংশগ্রহণ করে না তখন ভোটার কম হয়।’

চট্টগ্রাম-৮ আসনের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হবে। প্রার্থীদের মধ্যে কোনো রকমের সংঘাত নেই। তাদের মধ্যে কোনো মনোমালিন্য নেই। সুতরাং নির্বাচন সুন্দর হবে, ভালো হবে। আমি নিজেও বোয়ালখালী যাবার পথে একজনের পোস্টারের পাশে আরেকজনের পোস্টার দেখেছি। লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি অত্যন্ত সুন্দর। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে, নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। ভোটাররা যে প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন, তিনিই জয়ী হবেন।’

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, র‌্যাব-বিজিবি, আনসার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা ছিলেন।

জাসদ নেতা সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপির আবু সুফিয়ান। ১৩ জানুয়ারি সেখানে ভোটগ্রহণ হবে। আবু সুফিয়ান নির্বাচন কমিশনে একাধিক অভিযোগ দিয়ে বারবার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে আসছেন।

চট্টগ্রাম ৮ উপ-নির্বাচন সিইসি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর