প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান, থাকছে ৫ স্তরের নিরাপত্তা
৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:১০
বিশ্ব ইজতেমার ময়দান থেকে: তাবলীগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ময়দানের প্রস্তুতি কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইজতেমাকে সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও পুলিশ, র্যাব, সিটি করপোরেশন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে ময়দানের ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রতি বছরের মতো বাড়তি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভেতর ও বাইরে বিভক্ত হয়ে কাজ করবেন বলে জানান আয়োজকরা। ইজতেমা ময়দানে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, আগত লাখ লাখ মুসল্লিদের নিরাপত্তায় এখানে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে। নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে পুরো ইজতেমাস্থল। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন।
আগামী ১০, ১১, ১২ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা এ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১২ জানুয়ারি রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমা। ১৩ জানুয়ারি সকালের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন মুসল্লিরা। পরে মাওলানা সা’দ পন্থী অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১৯ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজতেমা ময়দানে বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে। আগত মুসুল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। বিদেশী নিবাস, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা এরইমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগত বিদেশী মুসল্লিদের সুবিধার্থে বিদেশী নিবাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ ও পয়ঃনিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি এবং র্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে ব্লিচিং পাউডার ও মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন ও ধুলো বালু যাতে না ওঠে সেজন্য পানি ছিটানোরও ব্যবস্থা থাকছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে প্রতিদিন সাড়ে ৩কোটি গ্যালন পানির ব্যবস্থা থাকছে। বাড়তি টয়লেট নির্মাণ ও পাকা টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে মুসল্লিদের কোন সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ময়দানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা তিনদিন করে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১৮ সালে মুসল্লিদের দুই পক্ষের বাদানুবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনার পর আলাদাভাবে দুই গ্রুপ ইজতেমার আয়োজন করছে। আগামী ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে জোবায়ের গ্রুপের বিশ্ব ইজতেমা। ৪দিন বিরতির পর ১৭ জানুয়ারি শুরু হবে সা’দ অনুসারীদের ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের দুই গ্রুপের দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।