এখন শুধু শ্রদ্ধা জানানোর অপেক্ষা…
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২১:২৮
সারাবাংলা ডেস্ক
ঢাকা: বুকের রক্ত দিয়ে তাঁরা ছিনিয়ে এনেছিলেন ভাষার অধিকার। আর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা মাত্র। একুশের প্রথম প্রহর থেকে পুরো জাতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন সেইদিনের ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে।
শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনারের দিকের রাস্তায় যানচলাচল ও লোকজনের আনাগোনা বন্ধ। নিরাপত্তায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনের রাস্তাটিও। তবে শুধু রোগীবাহী গাড়ি ও এম্বুলেন্সগুলোর জরুরী বিভাগে ঢোকার অনুমতি আছে।
আজ সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফজলে রাব্বী হলের মোড় থেকে শহীদ মিনারগামী রাস্তা ও মধুর ক্যান্টিনের দিক থেকে শহীদ মিনারের দিকের রাস্তাটিতেও যান চলাচল ও লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য এসব রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন ও লোকজনকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল আগেই। এরপরেও যারা না জেনে কিংবা ভুল করে আসছেন এ পথে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আর এতে আশেপাশের সড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। যানজট সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
গতকাল থেকেই ধুয়েমুছে সাফ করা হয়েছে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ। রাস্তার পাশের দেওয়ালগুলোর শ্যাওলা ধুয়ে রঙ করে নতুনভাবে আঁকা হয়েছে ভাষা শহীদদের ছবি। আছে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারির শহীদস্মৃতির প্রতীকি চিত্রও।
শহীদ মিনারের সামনের ঝকঝকে পথে আঁকা হয়েছে নানা আলপনা। এই আলপনা ধরে খালি পায়ে দলে দলে মানুষ যাবে শহীদ মিনারের বেদিতে। এই পথ শুধু পথ নয়, এই পথ ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তে স্নাত বাংলাভাষীদের পবিত্রভূমি।
আগেই জানানো হয়েছে, রাত ঠিক ১২টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদের শ্রদ্ধা জানানোর পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে শহীদ মিনার।
শহীদ মিনারে যেতে চাঁনখারপুল হয়ে পলাশী মোড় দিয়ে ঢোকা যাবে। এছাড়া নীলক্ষেত হয়ে পলাশী মোড় দিয়েও যাওয়া যাবে শহীদ মিনারে। পলাশীর মোড় হয়ে জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তায় সারি ধরে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এরপর ঢামেকের প্রাশাসনিক ভবনের সামনের রাস্তা ও দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা দিয়ে বের হতে হবে।
বরাবরের মতো শহীদ মিনারে ঢুকতে হবে খালি পায়ে। আর ঢোকার পথে ব্যক্তিগত কোনো গাড়ির পার্কিং করা যাবে না।
শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণত ভোর থেকে প্রভাতফেরি করে আসেন সাধারণ মানুষরা। সাধারণ মানুষদের নিয়ে আসা ফুল দিয়ে দিনভর সাজানো হবে হবে শহীদ মিনারের মূল বেদি ও আশপাশের অংশ।
এদিকে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র্যাব। এর মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষরা যাতে সুষ্ঠুভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারে এজন্য ওই এলাকার কিছু রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকেই শহীদ মিনারের সামনের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ রাস্তাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে আগামীকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারবেন পলাশীর মোড় দিয়ে। একাধিক আর্চওয়েরসহ নানা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পোশাকে, সাদা পোশাকে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন মাসুদুর রহমান।
এদিকে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো উপলক্ষে ব্যাপক লোক সমাগম হবে। নাশকতার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও কেউ যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য র্যাবের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের পর্যবেক্ষণ করা হবে। ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। থাকবে র্যাবের পেট্রোলিং-এর ব্যবস্থা। কুইক রেসপন্স টিমকেও রাখা হয়েছে প্রস্তুত।
শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলোর মধ্যমণি আনত মস্তকের মা মিনারটিতে এরইমধ্যে উঠে গিয়েছে টকটকে লাল সূর্য। এখন শুধু একুশের প্রথম প্রহরের অপেক্ষা। শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত অমর একুশের স্মৃতিবাহী শহীদ মিনার।
সারাবাংলা/ইউজে/এমএ/এসবি