ইরানের মিসাইল হামলা: হোয়াইট হাউজে কি ঘটেছিল তখন?
৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:৩৯
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বেজে উঠেছিল যুদ্ধের দামামা। মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরান মিসাইল ছুড়লে, আশঙ্কা করা হচ্ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বড় কোনো সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিতে পারেন। তবে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে, মার্কিন কমান্ডার ইন চিফ শুধু ইরানকে ‘চরিত্র’ বদলানোর তাগিদ দিয়েছেন। এছাড়া, ইরানের শাসকদের বোধোদয় হলে তাদের সঙ্গে শান্তির পথে হাঁটতে আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন।
তবে ট্রাম্পের ১০ মিনিটের বিবৃতির মতো সাদামাটা ছিল না হোয়াইট হাউজের ভেতরকার পরিস্থিতি। পর্দার আড়ালে চলছিল শলা-পরামর্শ ও উৎকণ্ঠা। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, শেষ সময় পর্যন্ত ট্রাম্প তার বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট বদলিয়েছেন বারবার।
হোয়াইট হাউজ সিচ্যুয়েশন রুম
ওয়াশিংটন সময় মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে মার্কিন গোয়েন্দাসংস্থাগুলো হোয়াইট হাউজে বার্তা পাঠাতে থাকে সম্ভাব্য ইরান হামলা নিয়ে। কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি হত্যার পর ইরানিরা কোনো না কোনোভাবে পাল্টা আঘাত হানবে সে ব্যাপারে সতর্ক ছিল সামরিক সদর দফতর পেন্টাগন। এদিন বিকেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, দ্য হোয়াইট হাউজ ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর রবার্ট সি ও’ব্রাইন ও ট্রাম্প পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। এর কিছুক্ষণ আগেই গ্রিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে আসেন ট্রাম্প।
মিসাইল হামলা, উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি
ওয়াশিংটন সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে পেন্টাগন শনাক্ত করে ইরান মধ্যম পাল্লার ফাতেহ ১১০ ও শাহাবাব মিসাইল ছুড়েছে। আল আসাদ ঘাঁটি ও আশেপাশে সেগুলো ভূপাতিত হয়। ধ্বংস হয় ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, রেঁনেসা ড্রোন, এয়ার ট্রাফিক কনট্রোলের অংশ বিশেষ, কিছু সেনা তাবু। আল আসাদে প্রায় ১ হাজার মার্কিন সেনার অবস্থান ছিল।
কিছু মিনিট পর আরও কিছু মিসাইল ইরবিল ঘাঁটিতে হামলে পড়ে। সেখানে কয়েক শ মার্কিন ও ন্যাটো সেনা ছিল। ইরবিলের ক্ষয়ক্ষতি বা সেখানে কারও হতাহতের খবর এখনো অপ্রকাশিত।
হামলার পর জরুরি অবস্থা কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয়দের জানানো হয়। ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক ঘণ্টা তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময়ও বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা বজায় ছিল। ইরানের হামলায় আমিরকান সৈন্য নিহত হলে পাল্টা প্রতিশোধের পরিকল্পনা ছিল অধিকাংশ মার্কিন সমরবিদের।
সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম আগামী কিছু দিন কি ঘটে তা দেখার পরামর্শ দেন ট্রাম্পকে । এরপর জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্টের ভাষণের সময় ঠিক করা হয়। তৈরি করা হয় বক্তৃতার বেশ কয়েকটি ড্রাফটও। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টি নিজেদের দলীয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ও উৎকণ্ঠার কথা জানায়। ট্রাম্প সকাল সাড়ে ১১টা অর্থাৎ ভাষণের আগ পর্যন্ত তার বক্তব্য বারবার এডিট করেন ও পরবর্তীতে ভাষণ দেন।
পড়ুন:- হোয়াইট হাউজে দেওয়া ভাষণে কি বলেছিলেন ট্রাম্প
মিসাইল হামলায় কেন ‘ক্ষয়ক্ষতি’ এড়ানো গেল?
হামলার পর ইরানের পক্ষ থেকে ‘৮০ সেনার’ প্রাণহানি ও মার্কিন সামরিক স্থাপনা ধ্বংসের কথা দাবি করা হলেও পেন্টাগন ও ট্রাম্প তা অস্বীকার করেছে। এমনকি যৌথবাহিনীর কোনো সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডা। কোনো ইরাকি সৈন্য মারা যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মাহদিও। তাই প্রশ্ন উঠেছে ২২টি মিসাইল ছোড়ার পরও কেন ‘ক্ষয়ক্ষতি’ এড়ানো গেল?
এর জবাবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জোরাল ভূমিকা রেখেছে পূর্বের গোয়েন্দা সতর্কতা। মার্কিন গোয়েন্দা স্যাটেলাইটগুলো ইরানের মিসাইল ব্যবস্থাপনার ওপর নজর রাখছিল ইরানের হুমকির পর থেকেই । সেনাদেরও নিরাপদে রাখা হয়েছিল।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইরান যে সামরিক পদক্ষেপ নিবে তা আগেই বাগদাদকে জানানো হয়। যাতে ইরাকি সেনারা হতাহতের শিকার না হয়। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইরাককে জানানো তেহরানের এই পূর্ব সতর্কতা বার্তা পেন্টাগন নিজেদের সুরক্ষার কাজে লাগায়।
এছাড়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, ইরান ইচ্ছে করেই হামলার ব্যাপারে আগ্রাসী হয়নি। প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকেও সতর্ক করেছে যাতে বেসামরিক মানুষ ও মার্কিন সেনাদের ক্ষতি না করা হয়। যা একটি ভালো দিক।
আরও পড়ুন:-
ট্রাম্প চাইলে যুদ্ধ, ট্রাম্প চাইলে শান্তি
মিসাইল হামলায় ৮০ ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ হত্যার দাবি ইরানের (ভিডিও)
সোলাইমানি হত্যা: ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইরান
রাশিয়ার ‘সংহতি’, চীনের ‘সংযম’, তবে ইরান চায় ‘প্রতিশোধ’
ইরাকে আবারও হামলা যুক্তরাষ্ট্রের, যাচ্ছে ৩ হাজার সেনা
ইরাক ইরান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসাইল হমালা যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ হোয়াইট হাউজ