Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনা আমাদের আলোর দিশারী: সংসদে রাষ্ট্রপতি


৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:৫৩

ঢাকা: জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সার্থক উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যাত্রা পথে আলোর দিশারী। অনেক বাধা ও ষড়যন্ত্র পেরিয়ে তাঁর বলিষ্ঠ ও প্রত্যয়ী নেতৃত্বে জনকল্যাণমুখী আধুনিক বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের উন্নয়ন-বিস্ময়।’

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি এ সব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের অগ্রযাত্রার পথরেখাও সুনির্দিষ্ট। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ঘটাবে এবং ‘রূপকল্প-২০২১’-এর দুর্নিবার যাত্রা আমাদের পথের দিশারী।’

তিনি আরও বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও বৈরিতার মধ্যেও দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ এবং গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ইতিহাসের সাহসী সন্তানেরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত

সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

ভাষণের শুরুতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২০ সালের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ প্রদান আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। জাতীয় সংসদে ভাষণদানের এ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ায় আমি পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি। এ উপলক্ষ্যে আমি আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে মাননীয় সংসদ-সদস্যবৃন্দ ও প্রিয় দেশবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

‘ভাষণের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অমর শহিদকে, যাঁদের অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি একটি সার্বভৌম দেশ ও স্বাধীন জাতিসত্তা, পবিত্র সংবিধান ও লাল-সবুজ পতাকা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা  সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে  যাঁরা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।’

‘আমি আরও স্মরণ করছি তাঁদেরকে, যাঁরা এ দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লড়াইয়ে আত্মত্যাগ করেছেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামের তিন মহান পুরুষ  শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে  যাঁদের অবদান আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ড ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সেদিন শাহাদতবরণ করেছিলেন তাঁর সহধর্মিণী মহীয়সী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও পারভীন জামাল রোজী, ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন আহমেদ। আমি তাঁদের সবাইকে অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহ্‌’র কাছে তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’

আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের জনসভায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় শাহাদত বরণকারী নারীনেত্রী আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ

নেতা-কর্মীদের। আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌’র কাছে তাঁদের সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

গত বছর জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমরা হারিয়েছি তাঁদেরকেও আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এঁদের মধ্যে রয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদের মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও মাননীয় সংসদ-সদস্য ডা. মোঃ ইউনুস আলী সরকার, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মাননীয় সংসদ-সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদলসহ রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মন্ত্রী, সাবেক সংসদ-সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, নাট্যকার, অভিনেতা, সংগীত শিল্পী, চিত্রগ্রাহক ও সমাজসেবক।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে

মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া হলি আর্টিজান হামলা মামলা, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় দ্রুত প্রদান করা হয়েছে। দুর্নীতি, জুয়া, মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।”

ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। পরপর তিনটি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮.১৫ শতাংশে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮.২ শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৯০৯ মার্কিন ডলারে; গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ। দারিদ্র্যের হারও দ্রুত কমে এসেছে। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০১৯ সালে ২০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ১০.৫ শতাংশে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর