বস্ত্র মেলায় বাহারি পোশাকে নানা ছাড়
১১ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:৫৬
ঢাকা: বাহারি রঙের শাড়ি, হাতের কারুকাজ করা থ্রি পিস, চাদর, ওড়না, ছেলেদের প্যান্ট-শার্ট, বেড শিট, কুশন, কাভার— কী নেই! সবই প্রদর্শন ও বিক্রি হচ্ছে জাতীয় বস্ত্র মেলায়। শুধু তাই নয়, সুতা তৈরির যন্ত্রপাতি, সুতার উপকরণ তুলাসহ বস্ত্র খাতের প্রায় সবই তুলে ধরা হচ্ছে মেলায়। মেলায় বিভিন্ন পোশাক সামগ্রীতেও মিলছে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়।
বস্ত্র দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই মেলার আয়োজন করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) মেলা বন্ধ থাকলেও শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় মেলা। আগামীকাল রোববারও সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
মেলায় সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৪৭টি স্টল অংশ নিয়েছে।
মেলার মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে জাতির পিতার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। স্টলটিতে ধারাক্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পরের স্টলটিই শেখ হাসিনা কর্নার। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্জিত বিভিন্ন পুরস্কারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পরের ধারাক্রমে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, পাট অধিদফতর, তুলা উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম ও সেবাসমূহ তুলে ধরছে।
মেলায় দেশি প্রতিষ্ঠান টোয়েলভ তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য প্রদর্শন করছে। প্রকারভেদে বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড় রয়েছে। স্টলটিতে ক্রেতাদের বেশ ভিড়ও দেখা গেছে। আরেক দেশি ব্রান্ড প্রাইস টি শার্ট, ডেনিম, টপ ও ত্রি পিস বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আব্দুল হামিদ রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলায় প্রথম দিন কিছু দর্শনার্থী ছিল। ধীরে ধীরে দর্শনার্থী আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’
বুনি সুতা নামের বুটিক শপ তাদের তৈরি বেড কাভার, কুশন-কাভার, পর্দা, লেডিস ওয়ান পিস ও খেলনা বিক্রি করছে। স্টলের কর্মচারী নজিবুর রহমান টুটুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে দর্শনার্থী কম থাকায় বেচাকেনাও কিছুটা কম।’
মনিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স নামের একটি স্টলে মনিপুরি শাড়ি, চাদর ও মাফলার বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত সৌদামিনি শর্মা বলেন, ‘প্রথম দিনে তেমন লোকজন আসেনি। বেচাকেনা ভালো হয়নি।’
তিনি জানান, তাদের স্টলে মনিপুরি শাড়ি ৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, চাদর ৮০০ টাকা ও ওড়না ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহী থেকে আসা মিনু বুটিকস ও সারা বুটিকস তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে। তাদের একজন উদ্যোক্তা তাহমিনা আক্তার মিনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের স্টলে কুর্তি, ওয়ান পিস, সুতার কাজ করা থ্রিপিস, শাড়ি, বেড কাভার ও শাল বিক্রি করছি। এখানে রাজশাহী সিল্ক শাড়ি ২৫০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা, ড্রেস ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, হাতের কাজ করা শাল ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
নকশি কাঁথা ফাউন্ডেশন নামের স্টলেও বিভিন্ন ধরণের নারীদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। আর রাঙ্গামাটি থেকে আসা রাঙ্গামাটি পৌরসভা ৮নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতী সমিতি স্টলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের হাতের তৈরি বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হতে দেখা গেছে। এই স্টলটিতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
নীলা বুটিকস, বকুল বুটিকস ও পুষ্প বুটিকসর মতো অজস্র বুটিক শপ এই মেলায় অংশ নিয়েছে। সবাই তাদের পোশাকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আর জয়িতা ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন স্টলে শাড়ি, বেড শিট, থ্রি পিস, ওয়ান পিস, নকশি কাঁথা, আয়রন কাভার ও টেবিল রানারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। স্টলগুলোতেও ক্রেতাদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে।
আনোয়ার জামদানি উইভিং ফ্যাক্টির স্টলে জামদানি শাড়ি ও ওড়না বিক্রি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম শহীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিক্রি খুবই ভালো। প্রথম দিনে ৮টি শাড়ি ও তিনটি ওড়না বিক্রি করেছি। আমরা ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় শাড়ি বিক্রি করছি। আর ওড়নার দাম ৮০০ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।’
জামদানি শাড়ির অন্য একটি স্টল লাকি জামদানি উইভিং ফ্যাক্টরিতে ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায় শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। ওই স্টলটির বেচাকেনাও ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মিরপুরের বেনারসি কুঠি তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন শাড়ি ও লেহেঙ্গা প্রদর্শন করছে। প্রদর্শন করা শাড়ির দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা।
মেলায় টেক্সটাইল মিল করপোরেশন তাদের মিলে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ডেনিম, সুতা ও শীত বস্ত্র প্রদর্শন করছে। প্রথম দিন হচ্ছে মোটামুটি দর্শনার্থী ছিল বলে জানান এই স্টলে কর্মরতরা। বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনও (বিজিবিএ) মেলায় স্টল নিয়েছে। বায়িং হাউজ সম্পর্কে দর্শনার্থীদের তারা বিভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। পাশাপাশি ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফিনিশিং সম্পর্কেও স্টলটি থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
মেলায় আসা দর্শনার্থী ফার্মগেটের বাসিন্দা অনিকা দাস বলেন, ‘বাণিজ্যমেলায় এসেছিলাম। বস্ত্র মেলা দেখে ঢুঁ দিলাম। এখানে বেশ ভালোই পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।’
মগবাজারের বাসিন্দা ফয়সাল হাসান বলেন, ‘ছেলের জন্যে সোয়েটার নিলাম। ৫০ শতাংশ ছাড় পেয়েছি। কাপড়ের মানও ভালো।’