‘জেলে বসেই জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা’
১০ জানুয়ারি ২০২০ ২২:২৩
ঢাকা: ‘পাঁচ বছর আগে জাল টাকা তৈরির অভিযোগেই কদমতলী থেকে গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিল এই প্রতারক চক্রের দুই সদস্য। সেখানে বসেই তারা পরিকল্পনা করে ছাড়া পেয়ে বড় আকারে জাল টাকার কারবার করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ীই মুক্তির পর রাজধানীর ধানমন্ডির ৭/এ এর বাসাটি ভাড়া নেয় তারা। সেখানে গড়ে তোলা হয় জাল টাকা তৈরির কারখানা।’
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ধানমন্ডির ওই বাসায় অভিযান শেষে র্যাব-১০ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
অভিযানে অংশ নেওয়া র্যাব-১০ এর উপ অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘জেলখানাতে বসেই শাহ আলমের সঙ্গে সাইফুলের পরিচয় হয়। সাইফুলকে জাল টাকার ব্যবসার কথা জানায় শাহ আলম। প্রথমে সাইফুল রাজি না হলেও বাড়ি ও গাড়ির স্বপ্ন দেখালে রাজি হয়ে যায়। এরপর জেল থেকে বের হয়ে তারা জাল টাকা তৈরি শুরু করে। সাইফুল প্রথমে কিছু না পারলেও পরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ডিজাইনিং এবং সাদা কাগজের ওপর টাকা নিখুঁতভাবে প্রিণ্টিং করতে দক্ষ কারিগরে পরিণত হয়।’ বর্তমানে সাইফুল একজন জাল টাকা তৈরির পাকা প্রশিক্ষক হয়েছে বলে জানান মেজর শাহরিয়ার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে শাহ আলমকে (৪৫) আটক করে র্যাব-১০। তার দেওয়া তথ্যমতেই শুক্রবার ধানমন্ডির ওই বাসা থেকে প্রায় এক কোটি টাকাসহ সাইফুল ইসলামকে (৪২) আটক করা হয়।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) র্যাব-১০ এর উপ অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায় কদমতলী এলাকায় শাহ আলম বিভিন্ন কাপড়, কসমেটিকস, সুপার শপ ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে জাল টাকার নোট সরবরাহ করে আসছে। বৃহস্পতিবার তাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় ধানমন্ডিতে তাদের আরও একটি কারখানা রয়েছে। এরপর ধানমন্ডির ওই কারখানাটি রাতভর নজরদারিতে রাখে র্যাব।’
অভিযানে ধানমন্ডির বাসা থেকে সাইফুল ইসলামকে আটক করা হয়। ওই কারখানা থেকে কোটি টাকার ওপরে জাল নোট জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে ৮টি প্রিন্টার্স, কেমিক্যাল, ল্যাপটপসহ জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
অভিযান শেষে র্যাব-১০ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি কাইয়ুমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জেলে থেকেই তারা বড় আকারে জাল টাকা তৈরির কারখানা করার পরিকল্পনা করে। গত ৫ বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ধানমন্ডির এই বাসাতেই তারা জাল টাকার কারখানা তৈরি করেছিল এবং টাকা সরবরাহ করতো।
সিও আরও বলেন, ‘আজ জড়িতদের আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানায় মামলা দিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।’
কি পরিমাণ টাকা তারা বাজারে ছড়িয়েছে জানতে চাইলে সিও বলেন, ‘তারা ৫ বছর ধরেই জাল টাকার কারবার করে আসছিল। তবে কি পরিমাণ টাকা বাজারে ছড়িয়েছে তার সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে।’
ধানমন্ডিতে জাল টাকার কারখানায় র্যাবের অভিযান
কোটি কোটি এসব জাল টাকা যায় কোথায়, জানতে চাইলে র্যাবের উপ অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার বলেন, ‘তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় টাকা সরবরাহ করেছে বলে জানতে পেরেছি। বিশেষ করে ঈদ, পূজা, কোনো দিবস, শীত মৌসুম ও মেলাগুলোতে তারা টাকা সরবরাহ করে। এর পেছনে আর কারা কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা থাকবে।’
র্যাব সূত্রে জানা যায়, সাইফুল টাকা তৈরির কাজ করে। শাহ আলম বিভিন্ন মাধ্যমে সেই টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে শাহ আলম বিভিন্ন নারীকে টাকা দেয়। এক লাখ জাল টাকা মাত্র ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকায় বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। আর এক লাখ জাল টাকা তৈরি করতে খরচ হয় মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।