দেশের বাজারে ফিরছে মসলিন শাড়ি
১১ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:১৯
ঢাকা: দেশের বাজারে আবার ফিরছে তাঁত শিল্পের বিলুপ্ত মসলিন শাড়ি। ২০২৩ সাল থেকে পাওয়া যাবে ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ি । বিলুপ্ত এই তাঁতশিল্প পুনরুদ্ধারে প্রকল্প হাতে নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৩ সালে সম্প্রসারণ হবে মসলিন শাড়ি। ওই বছর থেকে দেশের বাজারে মসলিন শাড়ি বিক্রি শুরু হবে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলা বস্ত্রমেলায় মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পরিচালক মো. আইয়ুব আলী সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।
প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, “মসলিন বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালের ১৮ জুন মসলিন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যার নাম ‘বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (১ম প্রকল্প)।”
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, বগুড়া এবং কুষ্টিয়া। প্রকল্পটি শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। এরপর নেওয়া হবে তিনবছর মেয়াদী দ্বিতীয় প্রকল্প। আর সেই দ্বিতীয় প্রকল্পে আমরা দেশে মসলিন কাপড়ের বাজার পুরোপুরি সম্প্রসারণ করতে পারব।’
আইয়ুব আলী আরও বলেন, ‘দ্রুত এ প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। একটি মসলিন শাড়ি বানাতে কমপক্ষে ৩ থেকে ১০ মাস সময় লাগে। আর ব্যয় পড়ে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে মসলিন শাড়ি বিক্রয় না হলেও এটি উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে তাঁত বোর্ড।’
তিনি জানান, একটি শাড়ি বানাতে তাঁতি খরচ হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার। আর সুতার খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা। অপরদিকে একটি মসলিন ওড়না ৫ হাত ডিজাইনসহ বানাতে খরচ পড়ে প্রায় ৫৪ হাজার টাকা। আর ডিজাইন ছাড়া ১২ হাত ওড়না বানাতে খরচ পড়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আমরা মসলিন শাড়ি বানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছি। মসলিনের বাজার সম্প্রসারণে আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি।’
জানা গেছে, মসলিনের কাপড় ও সুতা তৈরির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। আর এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে তত দ্রুতই মসলিন শাড়ি বাজারে আসবে। একইসঙ্গে এ মসলিনের গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে তাঁতিদের জীবনযাত্রীর মানোন্নয়ন হবে।
এদিকে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় জামদানি শাড়িও বানানো হচ্ছে। মেলায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার জামদানি শাড়ি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে সেগুলো বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিক্রি করছে না। তারা তাদের উদ্ভাবনগুলো দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছে।
এদিকে মসলিন পুনরুদ্ধারে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেটির মূল উদ্দেশ্যে তিনটি। প্রথমত নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের সুতা ও কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষামূলকভাবে মসলিনের সুতা ও কাপড় তৈরি এবং তৃতীয়ত, বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার। আর এ প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁতিদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, মসলিন বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা, গ্রিক পর্যটক পিনটনি, টেইলর, উরে প্রমুখ তাদের লেখায় বাংলার মসলিনের বর্ণনা করেছেন। বিভিন্ন ধরনের সুতি বস্ত্রের মধ্যে ঢাকার মসলিন বা ঢাকাই মসলিনের সুখ্যাতি ছিল পৃথিবীব্যাপী। ফুটি কার্পাস নামে তুলা থেকে প্রস্তুত অতি চিকন সুতা দিয়ে মসলিন তৈরি হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে মসলিন আজ হারিয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলা বস্ত্র মেলা খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।