Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শিক্ষক-অভিভাবকরা নকল সাপ্লাই দেয়, এর চেয়ে দুঃখজনক কী হতে পারে’


১১ জানুয়ারি ২০২০ ২০:০৪

ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নিজের জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, জীবনে অনেক পরীক্ষায় ফেল করেছি। তবে কখনও পাস করার জন্য নকলের মতো অনৈতিক পথ অবলম্বন করিনি। এমনকি পাসের সময় কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি। এটি আমার জীবনের একটি অহংকার, এটি নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।

শনিবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি এ সব কথা বলেন। রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে এ সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আক্ষেপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ শুনি শিক্ষকরা ছাত্রদের কাছে নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায় অভিভাবকরা নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এদের কী শাস্তি হতে পারে। মনটা চায় আর কইলাম না… বুইঝ্যা নিয়েন… ।’ পরীক্ষায় নকল প্রবণতা ও অনৈতিক পন্থা অবলম্বনের কারণে দেশ ও জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘রাজনীতির কারণে যথাসময়ে ডিগ্রি পাস করতে পারিনি। ১৯৬৯ সালে ডিগ্রি পাস করি। ৭১ সালে ল’ পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে তা সম্ভব হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালে ল’ পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। চার পেপারে পরীক্ষা। তখন সারাদেশের পরীক্ষা হয়েছিল জগন্নাথ কলেজে। আমিও সেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পরীক্ষা যখন দিতে গেলাম দেখলাম সবাই মোটা মোটা বই দেখে লিখে যাচ্ছে। বই সামনে ছাড়া খুব কমই দেখেছি। আমি তখন বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য। ভাবলাম, আমি যদি এই কাজটি করি তাহলে কেমন হয়! মাঝে মাঝে সাংবাদিকরাও আসছে। তারা যদি কিছু লেখে! পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, কপালে যা আছে হবে কিন্তু বই দেখব না। যা পারি তাই লেখলাম। ফলাফলে চার সাবজেক্টের মধ্যে দুই সাবজেক্টে পাস করি আর দুই সাবজেক্টে ফেল করি। পরে অবশ্য ১৯৭৪ সালে ভালোভাবে পড়াশোনা করে ল’ পরীক্ষা দিয়ে পাস করি।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি যদি তখন নকল করতাম আর পত্রিকায় আসত তাহলে তো আজ তোমরা বলতে বেটা নকল করে পাস করেছে, এখন বড় বড় কথা বলো।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘ডিসিপ্লেন না মানলে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। তোমাদেরকে অনুরোধ, মানুষকে বোঝাও যাতে তারা ডিসিপ্লিন এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলেন। এভাবে যত্রতত্র রাস্তা ক্রস করা ঠিক না। যেখানে ব্যবস্থা নেই সেখানে অন্য কথা। সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিদেশিরা এসে আমাদের চাল-চলন দেখে হতাশ হয়। এ জন্য সবার প্রতি অনুরোধ, বিষয়টি ভেবে দেখবেন।’

রাষ্ট্রপতি তার রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক আগে থেকে। আমি একটা ছাত্র সংগঠন করতাম। জেলা সভাপতি ছিলাম। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে আমি তখন ভিপি ছিলাম। তখন জগন্নাথে ২৪/২৫ হাজার ছাত্র ছিল। ভিপি ছিলেন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। কাজী ফিরোজ রশিদও তখন ছাত্রলীগ করতেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জগন্নাথের ছাত্ররা না গেলে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রাম পূর্ণাঙ্গ হতো না, জমত না। আন্দোলন-সংগ্রামে জগন্নাথ কলেজের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আমিও পারি না।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আজ আমি আবদুল হামিদ, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, ফিরোজ রশিদ, আজ আমাদের তিনজনের পথ তিনদিকে। রাজু সংসদ সদস্য, তিনি একটি দল করেন। ফিরোজ রশিদও সংসদ সদস্য, তিনি আরেকটি দল করেন। আর আমি কোনো দলেই নাই। আমি সব দলই করি, আবার কোনোটিই করি না। আজ তিনজনের পথ তিনদিকে।’

সমাবর্তনে ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায়সহ বহু বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করে থাকে কিন্তু আমাদের স্নাতকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব শেষে যা নিয়ে বের হয় তা হলো উন্নত সংস্কৃতি। যা দিয়ে সে নিজেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সকল সমস্যার সমাধান নতুন ক্যাম্পাসে গিয়েই সম্ভব হবে বলে আশা করা যায় ‘

সমাবর্তন বক্তা ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা নিয়ে আমি দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করেছি।’ তিনি সকল গ্রাজুয়েটসদের দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

সমাবর্তনে স্নাতক ১১ হাজার ৮৭৭ জন, স্নাতকোত্তর ৪ হাজার ৮২৯ জন, এমফিল ১১ জন, পিএইচডি ৬ জন এবং সান্ধ্যকালীন ১ হাজার ৫৭৪ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

সমাবর্তনে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ। সমাবর্তন উপলক্ষে সারাদিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাটক মঞ্চায়ন ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জবি জবির সমাবর্তন

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর