বাদলের আসনে উপ-নির্বাচন কাল, ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটের প্রস্তুতি
১২ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেকোনো ধরনের সংঘাত ঠেকানো এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করেছে। ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) নির্বাচনি সরঞ্জাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কেন্দ্রে যাচ্ছেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটের আগে দৃশ্যত এই নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন করতে চাই। আশা করি, কোনো ধরনের অভিযোগ থাকবে না, এমন একটি নির্বাচন আমরা করতে পারব।’
জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির একই জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক এবং ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত আছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোছলেম এবং সুফিয়ানের মধ্যে হবে বলেই ধারণা ভোটারদের।
প্রচার-প্রচারণায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তেমন উত্তাপ ছিল না। তবে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মোছলেম উদ্দিন আশঙ্কা করেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাসীরা’ ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। আর আবু সুফিয়ান ‘অতীতের অভিজ্ঞতায়’ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেও প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা মেনে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করছি। সংঘাতের যদিও কোনো আশঙ্কা নেই, তারপরও সংঘাত হলে মোকাবিলার প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।’
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘একদম ফ্রেশ এবং ফেয়ার ইলেকশন হবে। গ্রামে বিভিন্ন কেন্দ্র আছে। সবকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার একসঙ্গে কাজ করবে। সুন্দর নিবাচন হবে।’
একটি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কর্ণফুলী নদীপাড়ের চট্টগ্রাম-৮ আসন। বোয়ালখালী পৌরসভার সঙ্গে থাকা ৯টি ইউনিয়ন হচ্ছে- কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী, পূর্ব গোমদন্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া এবং আহল্লা করলডেঙ্গা। চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ বোস্তামি থানার অধীন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড পড়েছে এই আসনে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর মাধ্যমে নগর ও জেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার। বাকি ভোটার চট্টগ্রাম নগরীতে।
নগরী ও উপজেলায় ১৭০টি কেন্দ্রের ১১৯৬টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রে ইভিএম পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সেনা সদস্যরা থাকবেন। এছাড়া প্রিসাইডিং, পোলিং মিলিয়ে ৩ হাজার ৭৬৭ জন নির্বাচন কর্মকর্তা এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নির্বাচন কর্মকর্তারা সরঞ্জাম নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গেছেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।
প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৪ জন এবং সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ৫ জন পুলিশের সঙ্গে থাকছে ১১ জন আনসার সদস্য। এছাড়া ৫ প্লাটুন বিজিবি, ৬ প্লাটুন র্যাব, ১৪টি মোবাইল ফোর্স ও ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিজিবির সঙ্গে মোবাইল টিমে থাকবেন।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জানিয়েছেন, নগরীতে প্রায় ১৭০০ পুলিশ সদস্য নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবেন। গত (শনিবার) রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে। রোববার দুপুরের পর থেকে ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জানিয়েছেন, ১২৫০ জন পুলিশ ও ৮৪০ জন আনসার সদস্য বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভাগ করে মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে ইভিএমে প্রথম ভোট হচ্ছে। ভোটারদের মধ্য থেকে বিভ্রান্তি দূর করতে ইতোমধ্যে মহড়া ভোট হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিনবারের সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছরের ৭ নভেম্বর তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।