স্বপন মামার নামে ‘মিথ্যা মামলা’, পাশের থাকার আশ্বাস পুলিশের
১২ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:২৭
ঢাবি: প্রতিবন্ধী মেয়ের ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো মামলার আসামি হতে হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবদুল জলিলকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে যিনি ‘স্বপন মামা’ হিসেবে পরিচিত। তবে আশার কথা হলো, আসামিপক্ষের করা এসব মামলা মিথ্যা বলেই প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে সব প্রমাণ থাকার পরও জামিনে বেরিয়ে এসে আসামি এখন ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যদের নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য, জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেছেন, স্বপন মিয়ার পরিবারের পাশে আছেন তারা।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাসুদেব গ্রামের আব্দুল জলিল ওরফে স্বপন মিয়ার ২০ বছরের প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৫০)। এই বাচ্চু মিয়া স্বপন মিয়ার চাচাত ভাই।
শুরুতে বিষয়টি গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা গ্রামে প্রভাবশালী হওয়ায় সালিশে সঠিক বিচার পায়নি স্বপন মিয়ার পরিবার। এরপর অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়াসহ তার দুই ভাই বাহার মিয়া (৪৫) ও আক্কাস মিয়াকে (৪০) আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন স্বপন মিয়ার স্ত্রী রহিলা। এ মামলায় বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে। পুলিশ বাচ্চু মিয়ার নামে অভিযোগপত্রও দেয়। প্রায় একবছরেরও বেশি সময় জেলে থাকার পর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হন বাচ্চু মিয়া।
স্বপন মিয়া জানান, জামিন পাওয়ার পর থেকে বাচ্চু মিয়া বেপয়োয়া হয়ে ওঠেন। মামলা তুলে নিতে স্বপন মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিতে শুরু করেন। এরপর স্বপন মিয়াসহ তার পরিবারের পাঁচ জনকে আসামি করে আদালতে দু’টি মামলা করেন বাচ্চু মিয়ার ভাই বাহার মিয়া।
পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, মামলা দু’টি তদন্তের ভার পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেগুলোতে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতেও জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের মামলাটি বিচারাধীন। এক্ষেত্রে আদালত যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই হবে। বাচ্চু মিয়াও আদালতের নির্দেশেই জামিন পেয়েছেন।
তবে স্বপন মিয়ার পরিবারের পাশে পুলিশ সবসময় আছে বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, তারা যেকোনো প্রয়োজনে পুলিশকে পাশে পাবেন।
আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মামলার খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। স্বপন মিয়া জানালেন, মামলা চালাতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ছোট ভাই বাহার মিয়া মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার দুই বছর হয়ে গেছে, আপনি এত দিনে এটা জেনে কী করবেন? মামলার বিচার হয়ে গেছে, এখন আবার আপনে কী জিগাইতেছেন? আপনি যে আমারে বিরক্ত করতেছেন, আপনি জানেন আমার কী হইছে? আমার ওয়াইফ (স্ত্রী) মারা গেছে। সে এটার বাদী হয়ে মামলা করছে। আমি এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। হেরারে (ভুক্তভোগী পরিবারকে) জিগান, তারা কী চায়?’
এদিকে ঘটনা জানার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘স্ট্যান্ড ফর স্বপন মামা’ স্লোগানে মানববন্ধন করেছেন। কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে অংশ নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিচের মেয়ের ধর্ষণের বিচার চান স্বপন মিয়া। এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি।
এ বিষয়ে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা ১৬ জানুয়ারি টিএসসির সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ব্যানারে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করব। ১৫ জানুয়ারি টিএসসির সংগঠনগুলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাসহ স্বপন মামা সংবাদ সম্মেলন করবেন।’