Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেভাবে গ্রেফতার ক্যাসিনো হোতা দুই ভাই এনু-রুপন


১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:০৯

ঢাকা: তিন মাস ধরে গা ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা দুই ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া। বারবার মোবাইলের সিম পরিবর্তন করেছেন তারা। সহজে যেন শনাক্ত করা না যায়, সেজন্য দাঁড়িও রেখেছেন এনু। সাত মামলা মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পালিয়ে থাকতে পারেননি তারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জালে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের। তথ্যপ্রযুক্তি আর বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ধরা হয়েছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ভোরে ক্যাসিনো কাণ্ডের মূল হোতাদের অন্যতম সেই এনু-রুপন গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের সময় ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া নগদ ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ক্যাসিনো ছাড়া আর কোনো পেশায় ছিলেন না এনু-রুপন

এনু-রুপনের তথ্য প্রথম চাউর হয় ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সেদিন ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানা এলাকায়। বংশালের একটি ভল্টের দোকান থেকে তথ্য পেয়ে রাতভর অভিযান চালিয়ে এনু-রুপনের ছয় তলা বাড়ি থেকে র‌্যাব উদ্ধার করে ৭০০ ভরি সোনা, সঙ্গে প্রায় এক কোটি টাকা। এরপর সেখান থেকে অভিযান চালায় ওয়ারীতে তার এক কর্মচারীর বাসায়। সেখান থেকে আরও ৩ কোটি টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব। গেন্ডারিয়ার ভাইয়ের বাসা থেকেও উদ্ধার হয় এক কোটি টাকা।

ওই সময় র‌্যাব জানিয়েছিল, অপারেশনের আঁচ বুঝতে পেরে এনু-রুপন গা ঢাকা দিয়েছে। এমনকি এনু থাইল্যান্ডে চলে পালিয়ে যান বলে জানায় র‌্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে তিন থানায় দায়ের হয় মোট সাতটি মামলা করে। এর মধ্যে চারটি মামলা হয় মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে, যার সবগুলোরই তদন্তের ভার পড়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ওপর।

ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, গত তিন মাস ধরে সিআইডির বেশ কয়েকটি টিম এনু-রুপনকে গ্রেফতার করতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছে। বার বার মোবাইলের সিম পরিবর্তন করেছে তারা। ফলে তাদের অবস্থান জানা সম্ভব হচ্ছিল না। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে এনু-রুপন কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকে সমুদ্র পথে মিয়ানমার ও মালয়শিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর তারা ভারত হয়ে দুবাই অথবা নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন।

সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির অন্তত চারটি টিম গত তিন মাস ধরে এনু-রুপনকে ধরতে সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছে। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয় সিআইডি। তারা দু’জনই নিয়মিত সিম ও বাসা পরিবর্তন করছিলেন। এনু দাঁড়ি রাখায় তাকে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবস্থান পরিবর্তনের জন্য শুরু থেকেই এনুর কর্মচারী শেখ সানি মোস্তফা সহযোগিতায় তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। সিআইডি সানিকেও গ্রেফতার করেছে।

আরও পড়ুন- ক্যাসিনো ব্যবসা: গেন্ডারিয়া থানা আ.লীগের ২ নেতার খোঁজে র‌্যাব

সানির সহযোগিতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গত তিন দিন ধরে কেরানীগঞ্জের শুভাড্যা এলাকায় তাদের নজরদারিতে রাখে সিআইডি। সিদ্ধান্ত হয়, রোববার রাতের মধ্যে অবস্থান পরিবর্তন না করলে তাদের ধরা সম্ভব হবে। সেই অনুযায়ী অভিযানের প্রস্তুতি নেয় সিআইডি। অবশেষে সোমবার ভোরে তাদের গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় সিআইডি।

এনু-রুপনকে ধরতে অভিযানে অংশ নেওয়া দলের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এনু-রুপন আমাদের দেখে হতভম্ব হয়। তারা জানতে চায়, আমাদের তো র‌্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশের গ্রেফতার করার কথা নয়। আপনারা কারা? এরপর জানতে পারে, সিআইডি তাদের গ্রেফতারের জন্য গেছে। সিআইডি তাদের গ্রেফতার করবে— এটা তারা বিশ্বাসই করতে পারেনি।

আরও পড়ুন- এনামুল-রুপনের পাঁচ ভল্টে কোটি টাকা উদ্ধার, আরও ১৫ বাড়ির খোঁজ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, সিআইডি তাদের তিন মাস ধরে খুঁজছে। মানি লন্ডারিং মামলা সিআইডি ছাড়া অন্য কেউ তো তদন্ত করবে না। এজন্য হয়তো অন্য কোনো সংস্থা গ্রেফতার করবে না বলে ভেবেছিল তারা। তবে সিআইডি গ্রেফতার করবে— এমনটা না ভাবাটা তাদের বোকামি।

সিআইডি সূত্র জানায়, তাদের কাছে শুরু থেকেই অন্তত তিন কোটি টাকা ছিল। গত তিন মাসে বেশিরভাগ টাকাই বিভিন্ন কাজে খরচ করে ফেলেছে। সবশেষ ৪০ লাখ টাকা তাদের হাতে ছিল। ওই টাকা দিয়ে ভিন্ন নামে পাসপোর্ট তৈরি করে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেখান থেকে দুবাই অথবা নেপালে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে তাদের বেশি পছন্দ ছিল নেপাল। কারণ নেপালীদের মাধ্যমেই এনু-রুপন ক্যাসিনোর আধুনিক সরঞ্জাম বাংলাদেশে এনেছিল। অভিযানের সময় পলাতক নেপালীরাই এনু-রুপনকে নেপালে শেল্টার দেওয়ার কথা বলেছিল।

সিআইডি আরও জানায়, ক্যাসিনো থেকে অবৈধ পথে কালো টাকা আয় করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্স করেছে এনু-রুপন। কোটি কোটি টাকা তারা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নেপাল, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছে।  সিআইডির দাবি, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরও বাড়ি, গাড়ি ও টাকার সন্ধান মিলবে। কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাইদও তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিঙ্গাপুরে শত কোটি পাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাইদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। জড়িত প্রমাণ পেলেই তাকেও গ্রেফতার করা হবে।

এনু-রুপন ক্যাসিনো কাণ্ড ক্যাসিনো হোতা গ্রেফতার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর