‘পূজার দিন ভোট নয়’ দাবিতে অবরুদ্ধ শাহবাগ
১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:১৮
ঢাকা: একই দিন সরস্বতী পূজা হওয়ায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এতে করে শাহবাগের আশপাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভোটের তারিখ পেছানোর সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা অবরোধ চালিয়ে যাবেন। বিতর্কিত এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হয়েছে, সে কারণে নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নিতে শুরু করেন ঢাবি’র বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা মাঝসড়কে অবস্থান নিলে শাহবাগ ঘিরে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী ৩০ জানুয়ারি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে এই পূজা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পূজার দিনেই ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে পূজার বিভিন্ন আচার পালনে বাধার মুখে পড়বেন। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এর আগে, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে একাধিকবার ভোটের তারিখ পেছাতে চিঠি দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনে। অন্য একাধিক সংগঠনও নির্বাচন কমিশনকে ভোটের তারিখ পেছানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে তাকে কাজ হয়নি। নির্বাচন কমিশন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল।
পরে সরস্বতী পূজার সঙ্গে ঢাকা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ধর্মীয় দিক থেকে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, আদালত নির্দেশ দিলেই কেবল তারা ভোটের তারিখ পেছাতে পারবেন। তবে মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে ৩০ জানুয়ারিই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ বহাল রয়েছে।
আদালতের এ আদেশের পর রিটকারী আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি আপিল করবেন। শিক্ষার্থীরাও আদালতের এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন। তারা ভোট পেছানোর দাবিতে অনড় রয়েছেন।
ঢাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মেহেদী হাসান শান্ত সারাবাংলাকে বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়। কারণ তারা চাইলেই এই তারিখটি এড়াতে পারত। কমিশন জানত এটি পূজার দিন। সেটি না করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে রংপুরের নির্বাচন (রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন, ওই দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার সপ্তমী ছিল) নিয়েও সিইসি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাদের এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।
শান্ত আরও বলেন, কমিশন পূজার তারিখ না জানলেও যখন হাইকোর্টে রিট করা হলো, তখন কেন তারা তারিখ পেছাল না? সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সরস্বতী পূজার দিন ক্যাম্পাসসহ পুরো ঢাকা শহরে উৎসব করে। ভোটও তো উৎসব। এখন আমরা কোন উৎসব করব— ভোট উৎসব নাকি ধর্মীয়? কাজেই এই ভোটের তারিখ পেছাতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। যতক্ষণ কমিশনের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাচ্ছি না, ততক্ষণ আমরা শাহবাগ চত্বর ছাড়ব না। এ ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শেখ হাসিনার উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কাটাবন থেকে শাহবাগের দিকের রাস্তা দিয়ে যানবাহনগুলো আটকে আছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ এড়াতে বাকি সব রাস্তার গাড়ি বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।