সংসদ ভবন থেকে: ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থার ব্যাংকে থাকা বিপুল পরিমাণ উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, সংস্থা সমূহের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়ে আছে, যা জনগণের জন্য ব্যবহার করা সমীচীন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সংসদে ‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০’ শীর্ষক বিলটি উত্থাপন করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী জানান, সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন, যা বর্তমান সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা মেটানো কঠিন। বিভিন্ন সংস্থার তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা পড়লে তা উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজে লাগবে।
বিলের বিধান অনুযায়ী, সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় নির্বাহের অর্থ, আপদকালীন ব্যয়ের জন্য বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের অতিরিক্ত উদ্ধৃত্ত অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
সন্ধ্যায় অর্থমন্ত্রী সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন। পরে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলের তফসিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং এই তফসিল সংশোধনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। বিলে ৯টি ধারা ও একটি তফসিল রয়েছে। তফসিলে সংস্থাগুলোর তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো সংস্থা তহবিলে রক্ষিত অর্থ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান না করলে সরকার ওই সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। বিলের আরেক ধারায় বলা হয়েছে, তফসিলভুক্ত সংস্থাগুলোর উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার ক্ষেত্রে এই আইনের বিধানই প্রাধান্য পাবে। কোনো সংস্থা এই আইনের কোনো বিধানকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করলে তা অকার্যকর মর্মে গণ্য হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত/আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ অন্যান্য স্বশাশিত প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর শেষে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবের স্থিতি থেকে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়ে আছে। সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সে কারণে এই অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় ও সরকারি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এসব সংস্থার তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার মাধ্যমে সরকার গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্থাগুলোর উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন শীর্ষক বিলটি আনা হয়েছে।