Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমাজ-রাজনীতি থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান


১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:০০

ঢাকা: যারা জাতির মীমাংসিত বিষয় মানবে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকার করবে না, ২৬ মার্চকে স্বীকার করবে না, যারা গণহত্যা স্বীকার করবে না, যারা সংবিধানের চার মূলনীতি মানবে না, তারা বাংলাদেশের রাজনীতি-সমাজনীতি করতে পারে না। এটিই জন্মশতবার্ষিকীর চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই মুজিববর্ষে জাতিকে এই ঐক্যমত অর্জন করতে হবে তাহলেই বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতি-সমাজনীতি থেকে ভেসে গিয়ে আবার সেই একাত্তর-বাহাত্তরের বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।

মুজিববর্ষ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, তার চিন্তা-চেতনা, তিনি যে জাতীয় চার মূলনীতি নিয়ে সংবিধান রচনা করেছেন তা আলোচনার মধ্যদিয়েই জাতির পিতা তথা বাংলাদেশের মূল রাজনীতির ধারাটা চলে আসবে।’

তিনি বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কারা কী মানল, না মানল এটি এখন দেখার ব্যাপার নয়। তার কারণ একটি পরিবারের পাঁচ সন্তান থাকলে তার ভেতর একটা কুলাঙ্গারও থাকে এবং সেই কুলাঙ্গার সন্তান ভিত্তিতেই থাকে। তার কোনো অস্তিত্ব থাকে না আল্টিমেটলি। পরিবারের কাছেও না, সমাজের কাছেও না।’

ভারতে রাজনৈতিক দলগুলোর সোহার্দ্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধী যিনি ভারতের সাম্প্রদায়িকার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাকে নাথুরাম মেরেছিল। কারণ তিনি (মাহাত্মা গান্ধী) রায়টের বিরুদ্ধে তখন একটা অবস্থান নিয়েছিলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবার্ষিকী বা মৃতুবার্ষিকী যেভাবে বিজেপির মতো একটি কঠিন সাম্প্রদায়িক শক্তি পালন করছে। এটা কিন্তু অন্তত আমাদের দেশের তথাকথিত ওই শক্তির (বিএনপি-জামায়াত) কোনো চেতনা আসে না। অর্থাৎ যে কুলাঙ্গার সে কুলাঙ্গারই থাকবে।’

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রচারণা এবং তা পরবর্তীকালে তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে দাবি করেন আমু। তিনি বলেন, ‘আজকে যদি আমরা তার এই জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সেই কর্মকাণ্ডগুলো আবার তুলে ধরে আনতে পারি এবং আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি, অসির চেয়েও মসির জোর বেশি। আমাদেরকে লেখনীর মাধ্যমে, আলোচনা-সেমিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে একটি গণজোয়ার-গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করার মধ্য দিয়েই কিন্তু তারা আবার ভেসে যাবে। আবার নতুন করে সেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হবে। সেই একাত্তর, বাহাত্তরের বাংলাদেশ। আবার আমরা সৃষ্টি করতে পারি এই কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে সক্রিয়ভাবে পালন করার মধ্যদিয়ে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম মুজিববর্ষ উদযাপনের ১৪ দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সন্ধ্যা ৬টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা মোমবাতি প্রজ্বালন করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে যাব মহামানবের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এই কর্মসূচি সারাদেশে একযোগে পালন করা হবে।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতির পিতার অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘ধর্মের রাজনীতির প্রশ্নে তার যে একেবারে অবিচল অবস্থা, এটা কিন্তু ভুলেই যেতে বসেছি বিভিন্নভাবে। কারণ ৭৫’র পরবর্তীকালে ধর্মের রাজনীতির যে প্রাদুর্ভাব, সেটা কোন জায়গায় নিয়ে গেছে আমাদের শুদ্ধ সবাইকে, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা যদি তার সর্বশেষ বক্তৃতাগুলোও পড়ি, তাহলে দেখব তিনি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে খুব সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন। এই দেশের গরিব মানুষের মুক্তি; তার প্রধান বিষয় ছিল। তিনি বলতেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব; এটি কিন্তু কথার কথা ছিল না। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে গিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সর্বোপরি তিনি কথা রেখেছিলেন এবং করে দেখেছিলেন, সেটি হচ্ছে জাতীয় ঐক্য।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে রাজনৈতিক দর্শন সেই ব্যাপারে যদি আলোচনা করে একটা আমরা মতে আসতে না পারি তাহলে এই শতবর্ষ উদযাপনটা সঠিক হবে না বলে মনে করি। আজকে যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের রাষ্ট্রীয় সামাজিক সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি। তখন কিন্তু বাংলাদেশে একটা নির্দিষ্ট মহল এবং চক্র; এই কর্মসূচিকে সমর্থন দেয়নি। যে বিএনপি এবং তার দোসর জামায়াত জঙ্গি-রাজাকার। তারা কিন্তু জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন না, এটি একটা লজ্জাজনক ঘটনা।’

মুজিববর্ষ উদযাপনে অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে ইনু বলেন, ‘১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে যারা ক্ষমতা নিয়েছিল, সেই সামরিক শাসক এবং রাজাকাররা; তারা ইতিহাসকে বিকৃতি করে ধামাচাপা দেয়, মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করে। সুতরাং এই শতবার্ষিকীর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমাদের মীমাংসিত বিষয় যেটা অমীমাংসিত করা হয়েছে, সেটিকে আবার ঐক্যমতে আনা। যারা মীমাংসিত বিষয় মানবে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসাবে স্বীকার করবে না, স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ মার্চকে স্বাকীর করবে না, যারা গণহত্যা স্বাকীর করবে না, যারা সংবিধানের চার নীতি সরকার করবে না, তারা  বাংলাদেশের রাজনীতি-সমাজনীতি করতে পারে না। এই ঐক্যমত্যটা অর্জন করতে হবে।’

তাই সকল পেশাজীবী এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইনু বলেন, ‘রাজাকার-জঙ্গি জামায়াত আর তার দোসর গণতন্ত্রের মুখোশধারী সাম্প্রদায়িক নব্য রাজাকারের দল বিএনপি তাকে সবরকম পর্যায়ে বরদাশত করতে হবে। এটি যদি আপনি সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন; তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি-সমাজনীতির চেতনা হুমকির মুখে থেকে যাবে। আমরা একবছর পরে যেন গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ১৯৭৫’এ যে রাজাকারদের আমদানি করা হয়েছে, তারা বিদায় নিয়েছে।’

‘আসুন, মীমাংসিত বিষয়ের ওপর শক্তভাবে দাঁড়াই। রাজাকার, জঙ্গি এবং জামায়াত ও তার দোসরদের সঙ্গে সবরকম রাজনৈতিক লেনদেন ছিন্ন করি, বন্ধ করি। সেইভাবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ অর্থাৎ একাত্তরের বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে, বাঙালির বাংলাদেশকে, চিনে নেব।’

১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য কামরুল আহসান খান, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাংবাদিক কাউয়ুম আবদুল মুকুল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা নিম চন্দ্র ভৌমিক, ফুটবলার বাদল রায়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের নেতা অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীসহ অনেকে।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুস সবুরসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।

১৪ দল আওয়ামী লীগ জামায়াত টপ নিউজ বিএনপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর