ফের বিলুপ্তির মুখে প্রাণিকুল, সময় ১০ বছর
১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২১
বর্তমানে আমরা জীববৈচিত্র্যের গণবিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ অঞ্চল আগামী দশ বছর অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাণীদের জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে এবং দূষণ কমিয়ে আনতে হবে অর্ধেকের বেশি। তাহলেই বর্তমান প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে। গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর সিএনএনের।
দ্য ইউএন কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি সোমবার (১৩ জানুয়ারি) এ বিষয়ে খসড়া প্রকাশ করে। যেখানে পরিবেশ রক্ষায় আগামী দশ বছরের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছর আগেও এমনই একটি পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছিল। যদিও সে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এখন ইকোসিস্টেম হুমকিতে রয়েছে, বাড়ছে প্রাণী বিলুপ্তির হার ও মানুষের টিকে থাকা মারাত্মক বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।
আর তাই বৈশ্বিক ভঙ্গুর ইকোসিস্টেমের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২০৩০ সাল এবং পূর্বের ক্ষতিপূরণে ২০৫০ সাল নাগাদ পরিকল্পনা নিয়েছে কনভেনশন। যেটির শিরোনাম হচ্ছে, লিভিং ইন হারমোনি উইথ নেচার। পরিকল্পনার শর্তগুলো পূরণ করতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
খসড়া পরিকল্পনায় যে ২০টি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে সেসবের মধ্যে রয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমানো, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রাণিবৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করা, প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো ইত্যাদি। এই খসড়া পরিকল্পনাটি চলতি বছরের অক্টোবরে চীনের কুনমিং সামিটে চূড়ান্ত করা হবে।
জীববৈচিত্র্যের ৬ষ্ঠ গণবিলুপ্তি, দায়ী মানুষ
বেশকিছু বছর ধরে অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করছেন, আমরা বর্তমানে জীববৈচিত্র্যের ৬ষ্ঠ গণবিলুপ্তির সাক্ষী হচ্ছি। আগের ৫টি গণবিলুপ্তির কারণ হিসেবে প্রকৃতি থাকলেও এবার মানুষ এমন ‘দানব’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বন্যহাতি এই জেনারেশনের সময়কালেই বিলুপ্ত হতে পারে। উভচর প্রাণীদের সংখ্যা কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকিতে রয়েছে সমুদ্রের বিস্তৃত প্রবাল।
জাতিসংঘ ২০১৯ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, পৃথিবীর ৮ মিলিয়ন প্রজাতির মধ্যে বর্তমানে ১ মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তির মুখে রয়েছে। যার হার অতীতে ১কোটি বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। মানুষ পৃথিবীর ৭৫ ভাগ ভূমি ও ৬৬ ভাগ সমুদ্রসীমানার দখল নিয়েছে প্রাক-শিল্পযুগের সময় হতে।
পূর্বের গণবিলুপ্তিগুলো হলো,
১ম গণবিলুপ্তি বা অর্ডভিশিয়ান ম্যাস এক্সটিঙ্কশন
পেলোয়েজিক সময়কালের অর্ডভিশিয়ান পিরিয়ড আনুমানিক ৪৪ কোটি বছর আগে এই ঘটনা ঘটে। সেসময় জীবিত প্রাণীর ৮৫ শতাংশের বিলুপ্তি হয়। মহাদেশীয় প্রবাহ বা আকস্মিক জলবায়ু পরিবর্তনে এমনটি হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২য় গণবিলুপ্তি বা দ্য ডেভোনিয়ান ম্যাস এক্সটিঙ্কশন
পেলোয়েজিক সময়কালের দ্য ডেভোনিয়ান পিরিয়ডে ৩৭.৫ কোটি বছর আগে বিনাশ ঘটে বেঁচে থাকা ৮০ ভাগ প্রাণীর। সমুদ্রে অক্সিজেনের অভাব, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, উল্কাপিণ্ডের আঘাত অথবা হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছিল।
৩য় গণবিলুপ্তি বা দ্য পারমিয়ান ম্যাস এক্সটিঙ্কশন
পেলোয়েজিক সময়কালের দ্য পারমিয়ান পিরিয়ডে আনুমানিক ৯৬ ভাগ জীবিত প্রাণীর বিলুপ্তি হয়। তা আনুমানিক ২৫ কোটি বছর আগে। ধারণা করা হয়, গ্রহাণুর আঘাত, আগ্নেয়গিরির প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনে এমনটা হয়েছিল।
৪র্থ গণবিলুপ্তি বা দ্য ট্রাইজায়িক-জুরাসিক ম্যাস এক্সটিঙ্কশন
মেসোজেয়িক সময়কালের দ্য ট্রাইজায়িক পিরিয়ডের শেষে, ২০ কোটি বছর আগে এই জীববৈচিত্রের এই গণবিলুপ্তি হয়। এসময় অর্ধেকের বেশি জীবিত প্রাণী মারা পরে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, পরিবেশের পিএইচ ও সমুদ্র উচ্চতার পরিবর্তনকে এ জন্য দায়ী করা হয়।
৫ম গণবিলুপ্তি বা কে-টি ম্যাস এক্সটিঙ্কশন
মেসোজেয়িক সময়কালের ক্রিটাসিয়াস সময়কালের শেষে এই গণবিলুপ্তিতে শতকরা ৭৫ ভাগ প্রাণীর মৃত্যু হয়েছিল। গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ডের আঘাতে ৬.৫ কোটি বছর আগে এমনটি হয়েছিল বলে অনুমান করেন বিশেষজ্ঞরা।