Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সরকার চাইলে দ্রুত বিচার, না চাইলে ৭০ বার চার্জশিট পেছায়’


১৫ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:২১

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: দেশের বিচার ব্যবস্থায় সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংরক্ষিত নারী আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘অবৈধ’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।

রুমিন বলেন, আইন ও বিচার ব্যবস্থা চলে সরকারের মর্জি মতো। খালাস ও দণ্ড হয় সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী। ফেসবুকে ভাইরাল হলে ও চাঞ্চল্য তৈরি করতে পারলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারের ইচ্ছামতো চলে বলেই খালেদা জিয়া জামিন পান না। আইন সরকারের গতিতে চলে বলেই সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ৭০ বারের মতো পেছানো হয়। সরকার চাইলে দেশে বিচার দ্রুত হয়। আর না চাইলে ৭০ বার মামলার চার্জশিট পেছায়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। তিনি ব্যারিস্টারর রুমনি ফারহানার বক্তব্য থেকে বিচার বিভাগের অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করে দেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে রুমিন বলেন, দেশের অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতিতে মন্দাভাব নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তার উল্লেখ নেই। এ বছরে গত বছরের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে। এর মূল কারণ পোশাক খাতের রফতানি আয় কমে যাওয়া। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশ দেশের লেনদেনের ভারসাম্য গত বছরের তুলনায় কমেছে। এর ফলে দেশের রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে কমেছে।

সরকার বিভিন্ন উপায়ে গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে গণমাধ্যমের ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর ১৪২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিকল্প মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিপীড়নমূলক নির্যাতন চলছে ডিজিটাল আইনের নামে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে সর্বত্র ভীতির সংস্কৃতি চালু করে, ভিন্ন মতকে দমন করে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতির ভাষণ কোনো অর্থ বহন করে না উল্লেখ করে রুমিন বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানকে কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারাগারে রেখে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান জাতির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না।

রুমিন ফারহানা বলেন, রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়েছে। কিন্তু সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার), সুজন, টিআইবি, বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিদেশি গণমাধ্যম আর আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল, এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোও এই নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছে। সেই নির্বাচনের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করে না।

তিনি আরও বলেন, সম্ভবত রাষ্ট্রপতি তার আগামী ভাষণেও একই রকম বক্তব্য দেবেন। কারণ মানুষ নিজেদের কথা বিশ্বাস করে না, কিন্তু অন্যদের বিশ্বাস করাতে চায়। এজন্য এ কথাটি মানুষ বারবার বলে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, কেবল অর্থের লোভে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে দেশের যে সর্বনাশ করে গেছেন, তা কোনোদিন পূরণ হবে না। এখনো দেশের কিছু কুলাঙ্গার বঙ্গবন্ধু ও মুবিজবর্ষ নিয়ে কটাক্ষ করার দুঃসাহস দেখায়। জাতি এদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না।

আলোচনায় অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, বেনজীর আহমেদ, বেগম কানিজ ফাতেমা আহমেদ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা রাষ্ট্রপতির ভাষণ সংসদ অধিবেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর