Tuesday 22 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমি দেশের তৃতীয় নারী উপাচার্য, দায়িত্ব খুব সহজে পেয়েছি তা নয়’


১৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৫৫ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ২২:২৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নারী হয়েও দেশের ‘পশ্চাৎপদ’ একটি জেলা থেকে উঠে এসে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পথটি সহজ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার।

তিনি বলেন, ‘কারও যদি আকাঙ্ক্ষা থাকে, ইচ্ছা সুদৃঢ় থাকে, তবে সে লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। আমি দেশের তৃতীয় নারী উপাচার্য। এই দায়িত্ব যে আমি খুব সহজে পেয়েছি, তা নয়। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি পশ্চাৎপদ জায়গা। আমি আরও পশ্চাৎপদ জায়গা কক্সবাজারের রামু অঞ্চলের একটি অতি রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যুব সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি তরুণ-যুবকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী দিয়াং মরিয়ম আশ্রমে শুরু হয়েছে তিন দিনের এই সম্মেলন। দেশের আটটি ধর্মপ্রদেশ থেকে আসা প্রায় পাঁচশ তরুণ-যুবক এতে অংশ নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার দেশের তৃতীয় নারী উপাচার্য। ২০১৪ সালের মার্চে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ফারজানা ইসলাম। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) উপাচার্য পদে নিয়োগ পান অধ্যাপক খালেদা একরাম। অন্যদিকে, গত বছরের নভেম্বরে চবি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ড. শিরীণ।

বাংলাদেশে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে চবি’র এই প্রথম নারী উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। একদিন পাশ্চাত্যের লোকেরা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলত। এখন আর তা নেই। নারীরা এখন অনেক এগিয়ে গেছে। প্লেন চালায়, জেনারেল পর্যন্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেও নারীদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

ড. শিরীণ বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে অনেক তরুণ-যুবক। আর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে ২৭ হাজার। আমি তাদের মা। তাদের সঙ্গে কাজ করতে করতে আমি নিজের বয়স ভুলে যাই। আমারও নিজেকে তরুণ মনে হয়। আমাদের সবার আকাঙ্ক্ষা হতে হবে একটাই— আমরা সবাই মিলে ভালো থাকব। যা কিছু শুভ, সুন্দর— সেগুলো গ্রহণ ও পালন করে নিজেকে ভালো রাখব, অন্যকেও ভালো রাখব।’

তরুণ-যুবকদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ধর্মের মূল সূত্র একটাই— মানুষের কল্যাণ করা। সব ধর্ম একটা কথাই বলে— জাগ্রত হও। অন্যায়-অসত্যের প্রতিবাদ করো। তুমি নিজে জাগো এবং অন্যকে জাগাও। কেন আমরা হানাহানি করব, কেন আমরা বিশ্বশান্তির কথা চিন্তা করব না? আমাদের এই দেশ ১৯৭১ সালে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিল। এই দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই যে যার যার ধর্ম পালন করবে। আমরা এগিয়ে যাব আমাদের প্রাণের তাগিদে।’

‘যুবক, আমি তোমাকে বলছি, ওঠ’— এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া যুব সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এতে প্রতিটি ধমর্প্রদেশের তরুণ-যুবকরা নিজস্ব কৃষ্টি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী সাজে সজ্জিত হয়ে অংশ নেন।

এরপর বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ও জাতীয় যুব কমিশনের চেয়ারম্যান লরেন্স সুব্রত হাওলাদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি চবি উপাচার্য ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ মজেস এম কস্তা এবং কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ। অনুষ্ঠানে দেশের আটটি ধর্মপ্রদেশের যুব সমন্বয়কারীরাও ছিলেন।

চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার দিয়াং মরিয়ম আশ্রম নারী উপাচার্য যুব সম্মেলন