কমিশন অনুযায়ী মজুরি স্লিপ, আন্দোলনের বিজয়ে খুশি পাট শ্রমিকরা
১৬ জানুয়ারি ২০২০ ২১:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাড়ে চার বছর আগে ঘোষিত মজুরি কমিশন অনুযায়ী পে-স্লিপ পেয়েছেন দেশের ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। আন্দোলনের সময় দেওয়া আশ্বাস সরকার বাস্তবায়ন করায় তারা সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, পে-স্লিপের ভিত্তিতে দ্রুত মজুরি পরিশোধের ব্যবস্থাও সরকার করবে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) মজুরি পরিশোধের পে-স্লিপ হাতে পাওয়া শ্রমিকদের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে চট্টগ্রামের আমিন জুটমিল, হাফিজ জুটমিলসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে।
দেশে মোট ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল আছে। এর মধ্যে ১১টি চট্টগ্রামে, খুলনায় ৯টি এবং ঢাকায় ছয়টি। এসব পাটকলে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়নযোগ্য মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন ঘোষণা করে সরকার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এই কমিশনের সাড়ে চার বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু ওই কমিশন কার্যকর করা হয়নি। প্রতি পাঁচ বছর পরপর মজুরি কমিশন ঘোষণার বিধান আছে।
২০১৫ সালে ঘোষিত কমিশন আর বাস্তবায়ন না হওয়ার আশঙ্কা করে গত নভেম্বর থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা।
চট্টগ্রামের হাফিজ জুটমিলের শ্রমিক ও আন্দোলনকারী সংগঠন পাটকল সিবিএ- নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছয়টি করপোরেশনের জন্য একসঙ্গে কমিশন ঘোষণা করা হয়েছিল। পাঁচটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করলেও শুধু পাটকল করপোরেশন বাকি ছিল। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে প্রথম বছর আমাদের ৪ হাজার ১৫০ টাকা বেসিক পাওয়ার কথা ছিল। এর পরের বছর থেকে বেনিফিটসহ ৮ হাজার ১৫০ টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের গত সাড়ে চার বছর ধরে সেই টাকা দেওয়া হয়নি। সেজন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম।’
২৩ নভেম্বর থেকে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটকলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থা বাতিল, পাট খাতে পযাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। এরপর গত ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন তারা। ১১ দফা দাবি হলেও শ্রমিকদের প্রধান দাবি ছিল পাট খাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা।
টানা চার দিন অনশন চলার পর ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সাংসদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনশন ভঙ্গ করে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। কিন্তু ১৫ দিনেও আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে আবারও আমরণ অনশনের কর্মসূচি শুরু করেন শ্রমিকরা।
এরপর বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গত ২ জানুয়ারি আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী পাটকল শ্রমিকদের পে-স্লিপ দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের আশ্বাস দিলে তারা অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত আমিন জুটমিলের শ্রমিক শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আশ্বাসের ১৫ দিন পূর্ণ হবে ১৭ জানুয়ারি। একদিন আগেই আমাদের পে-স্লিপ দেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রমিকরা এতে অনেক খুশি। আমরা মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তবে সরকারের কাছে আমাদের আরও প্রত্যাশা আছে। আমাদের অনেক কারখানায় চার সপ্তাহ, আট সপ্তাহ করে মজুরি বকেয়া আছে। সেটা যেন আমাদের দ্রুত পরিশোধ করা হয়।’
হাফিজ জুটমিলের উপমহাব্যবস্থাপক আহসান কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্থায়ী ও বদলি মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিককে পে-স্লিপ দিয়েছি। গত সপ্তাহ অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একজন শ্রমিক কতদিন চাকরি করেছেন এবং কত টাকা পাওনা হয়েছে, সেটা নির্ধারণ করে পে-স্লিপ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা তো অনেক খুশি। আশ্বাসের বাস্তবায়নটা হয়েছে, তাতেই খুশি। আশা করছি আমরা তাদের দ্রুত পে-স্লিপ অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করতে পারব।’
হাফিজ জুটমিলের শ্রমিক দিদারুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত পাওনার পে-স্লিপ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে যদি কমিশন কার্যকর ধরি, তাহলে আমাদের বকেয়া পাওনা আছে। সেটাও যেন আমাদের দ্রুত দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ শ্রমিকদের আছে।’
এদিকে, খুলনা থেকে সারাবাংলার করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, পে-স্লিপ দেওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত খুলনার পাটকল শ্রমিকরাও। সেখানকার সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ নেতা হুমায়ুন কবির বলেন, দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের আন্দোলনের ফসল শ্রমিকরা আজ হাতে পেয়েছে। তাদের ঘরে এখন ঈদের খুশির মতো আনন্দ।
স্থানীয় প্লাটিনাম জুটমিলের জিএম মো. গোলাম রব্বানী সারাবাংলাকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ১৫ দিন ধরে আমরা কাজ করেছি। আজ শ্রমিকদের মজুরি কমিশন অনুযায়ী পে-স্লিপ দিতে পেরেছি। এতে আমরাও আনন্দিত। খুলনা অঞ্চলের ৯ পাটকলে একযোগে সব শ্রমিককে পে-স্লিপ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাটকল পাটকল শ্রমিক পে-স্লিপ পে-স্লিপ বিতরণ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন মজুরি কমিশন