ধান কিনতে কৃষক তালিকায় অনিয়ম, মৌলভীবাজারে সংঘর্ষে আহত ২
১৭ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৩৩
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের রাজনগরে ধান কিনতে করা কৃষক তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর পিছনে দায়ী রয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ধান ক্রয়ের কৃষক তালিকা নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমের আমন ধান কেনা নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। কিন্তু কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় এই সিন্ডিকেট ধান বিক্রি করতে পারেনি। এর জের ধরে কিছুদিন থেকে চাপা ক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছরে কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান কেনার জন্য ৯ হাজার কৃষক থেকে বাছাই করে ১ হাজার ৪০ জনের তালিকা তৈরি করেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাগণ। তালিকার প্রকাশের পর এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। রাজগড়ের মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, তালিকায় অর্ধেকের বেশি ‘ভুয়া’ কৃষক। এমনকি একটি ফোন নাম্বার দিয়ে তালিকায় ঢুকেছেন ৫৭ জন।
আমন কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, ধান ব্যবসায়ী ও সরকার দলের একটি অংশের সমন্বয়ে গড়ে উঠে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্য প্রকৃত কৃষকদের ঠকিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। আর তাই ভুয়া কৃষকদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিতর্কিত তালিকা।
এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সরজমিনে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে জানা যায়, তালিকায় ভুল ছিল না কিন্তু হাতে লেখা তালিকা প্রিন্ট হয়ে আসার সময় সঠিক তালিকা বদলে যায়। জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারসহ হাতে লেখা তালিকা প্রিন্টের জন্য দেওয়া হয় উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক অসীম তালুকদারকে। সে তালিকা যখন প্রিন্ট হয়ে আসে তখন ঢুকে পড়ে সব ভুয়া কৃষকের নাম।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার সারাবাংলাকে জানান, কীভাবে তালিকা বদলে গেছে তা নিয়ে জানতে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তলব করি। তখন উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক (ওসি এলএসডি) অসীম কুমার জানান, একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবে এবং চাপে এই তালিকা বদলে দিতে হয়েছে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি সিন্ডিকেটের সদস্যের নামও লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ময়নু ইসলাম খানের নেতৃত্বে পাঁচ জন ধান মিলের মালিক রয়েছেন। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সিন্ডিকেটের নাম প্রকাশের পর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মহড়া দেয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষকের তালিকা নিয়ে ঝামেলা আছে এবং গৃহহীনদের ঘরের কাজে দুর্নীতি করা হয়েছে। তাই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। তিনি ধান কেনার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা করেছে প্রশাসন। দায় থাকলে প্রশাসনের থাকবে। আমরা সিন্ডিকেটে ঢুকব কি করে?
তবে এই অবস্থান কোনো দলের সিদ্ধান্ত নয় জানিয়ে রাজনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল আহমদ বলেন, যারা এখানে অবস্থান নিয়েছিল তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে সিন্ডিকেটের পক্ষে গেছে। কারো ব্যক্তিগত দায় সংগঠন নেবে না।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিতর্কিত তালিকার নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বসলে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে বিতর্কিত তালিকার পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খান এবং মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখতের সমর্থরা। সভাশেষে বিকেল ৪টার দিকে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায় এ সময় ২ জন আহত হন এবং একটি দোকান ভাঙচুর করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন বখত জানান, ধান ক্রয়ের সিন্ডিকেটের পক্ষে এবং বিপক্ষের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আমরা এই তালিকা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা হয়তো কারও স্বার্থে আঘাত লেগেছে তাই তারা হামলা করেছে। আমাদের দুজন আহত হয়েছে এবং একজন গরীব নেতার দোকান ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে এসে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খানের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ সেখানে যায়। উভয়পক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
বিতর্কিত এই তালিকার বিষয়ে রাজনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার সারাবাংলাকে জানান, এসি ল্যান্ডের অফিসে সব ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকা স্থগিত করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।