ছাত্রলীগ কর্মীদের বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে বললেন শেখ হাসিনা
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫১
ঢাকা: ‘ছাত্রলীগের হাতে আমি কাগজ কলম তুলে দিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা ছাত্রকে মনে রাখতে হবে, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে সন্তানকে মানুষ করে। কাজেই সেই সন্তান বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। বাবা-মার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। বাবা-মার মর্যাদা যেন ঠিক থাকে, সেটা দেখবে।’
এভাবেই বাবা-মাকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের দেশকে ভালোবাসা ও দেশের জন্য কাজ করার দিক-নির্দেশনা দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের ‘লিডারশিপ ওরিয়েন্টেশন’ কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের মুঠোফোনে কল করে কয়েক মিনিট কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এরপর লিডারশিপ ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
ছাত্রলীগের মূলনীতি শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির কথা তুলে সংগঠনটির সাংবিধানিক নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের হাতে আমি কাগজ কলম তুলে দিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা ছাত্রকে মনে রাখতে হবে, বাবা-মা অনেক কষ্ট করে সন্তানকে মানুষ করে। কাজেই সেই সন্তান বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। বাবা-মার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে। বাবা-মার মর্যাদা যেন ঠিক থাকে, সেটা দেখবে। বাবা-মাকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে কিন্তু দেশকে ভালবাসতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। পরিবার বা বাবা-মা তাদের প্রতি যেমন কর্তব্য সেই সাথে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। একজন রাজনৈতিক নেতার এটাই কর্তব্য।
দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে বারবার নিজের পিতাকে কারাগারে বন্দি থাকতে হয়েছে, সে কারণে নিজের পিতাকে খুব কম সময় কাছে পাওয়ার আক্ষেপও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
তিনি বলেন, বাবাকে খুব কম সময় পেয়েছি। এতে আমার কিন্তু কোনো আক্ষেপ ছিল না। কারণ আমি এতো ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা কখনো মনেই হয়নি। আর আমার মা, বাবার অবর্তমানে সেই দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নিতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ কিন্তু সবসময় আমার মার সাথে যোগাযোগ রাখত এবং আমার মা কিন্তু ছাত্রলীগকে দেখাশোনা করত। যখন বাবা জেলে থাকতেন, ছাত্রলীগের নেতাদের কখন কি করতে হবে, কি করণীয়, কি নির্দেশ দিতে হবে, সেটা কিন্তু আমার মা করতেন।
তিনি আরও বলেন, কাজেই আমাদের ছাত্রলীগের অনেক নেতা কিন্তু ছাত্রলীগ সংগঠন থেকেই তৈরি হয়। আজকে বাংলাদেশের অনেক নেতা, সেটা খুঁজে দেখলে দেখি ছাত্রলীগ থেকেই বেশিরভাগ নেতা হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই ছাত্রলীগের দায়িত্বটা কিন্তু অনেক বড়। আমরা মুজিববর্ষের ক্ষণগননা শুরু করেছি। মুজিববর্ষ উদযাপনে বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছি, শুধুমাত্র সরকারিভাবে না, আমরা উদযাপনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে নিজ নিজ এলাকায় নিরক্ষর মানুষকে স্বশিক্ষা দেওয়া, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে না গেলে তাদের স্কুলমুখী করতে উদ্যোগ নেওয়া, গৃহহারা মানুষ থাকলে তাদের তালিকা করে জমা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে যারা গৃহহারা মানুষ আছে তাদের জন্য গৃহ করে দিচ্ছি। তোমরা তাদের খোঁজ নিবে। বাংলাদেশে যারা গৃহহারা মানুষ আছে, তাদের সবার জন্য আমি ঘর করে দেবো। থাকার ব্যবস্থা করে দেবো, খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেবো। তাই সামনের দিনে ছাত্রলীগের অনেক দায়িত্ব আছে।
এ লক্ষ্যে জাতির পিতার নীতি-আদর্শ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলে সামনের দিকে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়াও ধান কাটা থেকে শুরু করে ধান রোপণ করা কোনো কাজেই কোন অসম্মান হয় না, তাই সব কাজের সমান মর্যাদা রয়েছে বলেও ছাত্রলীগ নেতাদের উপদেশ দেন শেখ হাসিনা।
এর আগে, গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানের উপস্থিতিতে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের উদ্বোধন হয়৷ এতে অংশ নিতে প্রায় ১৬শ’ নেতাকর্মী রেজিস্ট্রেশন করেছেন৷ কিন্তু ক্লাস শুরু করা হয় তিন শ’ জনকে নিয়ে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের লিডারশিপ ওরিয়েন্টেশন ছিল, সেখানে প্রধান অতিথির মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী মাননীয় নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।’