দেশে প্রথমবারের মতো হচ্ছে পার্কিং নীতিমালা
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:০৪
ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যে হারে গাড়ি বাড়ছে ঠিক সেই হারেই বাড়ছে যত্রতত্র পার্কিং। মাঝে মধ্যে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, ফুটপাত থেকে শুরু করে মূলরাস্তায়ও চলে যায় পার্কিং করা গাড়ির দখলে। এমনকি অলিগলিতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে যানজট চরম আকার ধারণ করেন। আর প্রতিদিনের এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতেই সরকার এই প্রথম দেশে পার্কিং নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সরকার প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া শহরের ভেতরে স্থানভেদে একেক ধরনের পার্কিং ফি নেওয়া হবে। আর এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে ইজারা ব্যবস্থার মাধ্যমে। রাজউক, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের এলাকার পার্কিং স্থান চিহ্নিত করে তা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া মানুষ যাতে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও এয়ারপোর্টে গাড়ি রেখে ভ্রমণ করতে পারে এবং ভ্রমণ শেষে ফের গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতে পারে সেজন্য ‘পার্ক অ্যান্ড রাইড’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়।
নীতিমালাটি নিয়ে এখন জনমত যাচাই শুরু করেছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। এরপর এটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে তা মন্ত্রিসভায় ওঠানো হবে। পরে গেজেট আকারে পাসের দিন থেকে তা কার্যকর করা হবে। নীতিমালাটি অনুমোদন পেলে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলা এলাকা এর আওতাভুক্ত হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ছুটির দিন এক ধরনের পার্কিং ফি ও ব্যস্ততম দিনে আরেক ধরনের পার্কিং ফি আদায়ের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়, পার্কিং স্থানসমূহকে থার্মোপ্লাস্টিক পেইন্টের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। খেলাধুরার স্থান, পিকনিক স্পটে রাস্তার উভয়পাশে ডিটিসির অনুমোদন নিয়ে পার্কিং করা যাবে। এক্ষেত্রে পার্কিং ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা দক্ষ করতে হবে। এছাড়া পার্কিং ফি আদায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগের মাধ্যমে গাড়ির ধরন চিহ্নিতের কথা বলা হয়।
রাস্তার ওপর দীর্ঘমেয়াদী পার্কিংকে এই নীতিমালায় অনুৎসাহিত করা হয়েছে। আবার অফপিক সময়, ছুটির দিন এবং রাত্রীকালীন পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে ডিসকাউন্টের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পার্কিং ফি নির্ধারণে কোনো একক কৌশল বাদ দিয়ে শহরের একেক স্থানে একেক রকম ফি নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে প্রায় ১৯টি জায়গা চিহ্নিত করে পার্কিং ইজারা দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ টি অনস্ট্রিট পার্কিং স্থান রয়েছে। তবে অপরিকল্পিতভাবে এসব অনস্ট্রিক পার্কিং চিহ্নিত করে ইজারা দেওয়ায় সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ রয়েছে।
বনানীর বাসিন্দা ইমতিয়াজ কাশেম জানান, গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সামনে ছুটির দিন ছেলেমেয়েরা গাড়িতে করে খেলতে আসে। তাদের বহনকারী গাড়ি থেকে পার্কিং ফি নিয়ে শিশুদের খেলাধুলায় অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এমনিতেই ছুটির দিনে পার্কিং ফ্রি করা হয়েছে। কিন্তু এখানে হচ্ছে উল্টোটা।
এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুরা হেঁটে খেলতে আসবে। গাড়ি নিয়ে আসবে কেন? গাড়ি নিয়ে এলে পার্কিং ফি দিতে হবে।’
তার জবাবে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ছেলেকে নিয়ে খেলতে নিয়ে আসা এক অভিভাবক বলেন, ‘মেয়র কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন। শিশুদের হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে আসার উপযোগী রাস্তা করেন নাই। তিনি কীভাবে বলেন, শিশুরা হেঁটে বা সাইকেলে আসবে খেলতে আসবে।’
এদিকে পার্কিং নীতিমালা হলে সিটি করপোরেশনকে পার্কিং স্পট নির্ধারণের জন্য অনুমতি নিতে হবে ডিটিসিএ কর্তৃপক্ষের। ডিটিসিএ বলছে, তারা পরিবহন বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পরামর্শে পার্কিং স্পট অনুমোদন দেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীর ভবনগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা রাখার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চিঠি দিয়ে বলেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখছি, পার্কিং রাখা হচ্ছে না। এজন্য মানুষ বাধ্য হয়ে সড়কে গাড়ি পার্কিং করে। যানজট তৈরি হয়। ভবনের পার্কিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নীতিমালা হলে তার এনর্ফোসমেন্টের দিক পুলিশ সক্রিয়ভাবে দেখবে।’
ডিটিসিএ’র ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার মো. আনিসুর রহমান সারবাংলাকে জানান, নীতিমালা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তারা মতামত আহবান করেছেন। এরপর জন মতামত বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে তা চূড়ান্ত আকারে পাঠানো হবে।
আগামী ৬ মাসের মধ্যেই নীতিমালাটি অনুমোদন হবে বলে আশা করেন ডিটিসিএ’র এই কর্মকর্তা।