‘ভোট পড়েছে ৫%, ডিজিটাল জালিয়াতি করে দেখানো হয়েছে ২২%’
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৫:৪৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন পরাজিত বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। নির্বাচন কমিশনের ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণাকে ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি বলেও দাবি সুফিয়ানের।
শনিবার (১৮ জানুয়ারী) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ‘জালিয়াতির চিত্র’ তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। উপ-নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, বিভিন্ন অনিয়ম এবং ইভিএমে ভোট কারচুপি জাতির সামনে উপস্থাপনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সুফিয়ান বলেন, উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে তথাকথিত ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা যায়। এটি মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো আরেকটি কৌশল। ইভিএম এখন মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। এতে ডিজিটাল ডাকাতির পর অভিযোগ করারও সুযোগ নেই। একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন তা নিজে জানারও সুযোগ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে সুফিয়ান বলেন, ‘মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু দেখানো হয়েছে ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০ থেকে ৮০টি জাল ভোট দিয়েছে। এভাবে ২২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।’
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ’২২ শতাংশ ভোটের মধ্যে আসলে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার নিজে। বাকি ভোট কেন্দ্র দখল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগও তুলে ধরেন আবু সুফিয়ান। তিনি জানান, নগরীর হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে বেলা ১২টার সময় ২ নম্বর কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিজাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যান। তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি দেওয়া হয়। তারা এসময় বলতে থাকেন, ১০ শতাংশ ম্যাচিং কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন। তখন অন্যজনের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা ভোটার নম্বর- ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০।
‘মৃত ব্যক্তি এবং প্রবাসীদের নামেও ভোট দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করেছেন। সরকারী গাড়ি ব্যবহার করেও কেন্দ্র দখল করা হয়েছে। ভোট শুরুর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএমের গোপন বুথে অবস্থান নেয়। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার পরই ব্যালট ইউনিটে নৌকার সমর্থকরা ভোট দিয়ে দেয়।’
ভোটগ্রহণের সময়ই অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন মো. হাসানুজ্জামানকে অভিযোগ করা হলেও তিনি নীরব থাকেন এবং অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ সুফিয়ানের। এভাবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি ধানের শীষের এই প্রার্থীর।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সুফিয়ান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই নির্বাচন এবং উপ-নির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোটের তারতম্য তুলে ধরে একে অবিশ্বাস্য এবং জালিয়াতির উদাহরণ হিসেবে মন্তব্য করেন।
এতে বলা হয়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৭৩৬। উপ-নির্বাচনে পেয়েছেন ১১ ভোট। কধুরখীর পাঠানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৮৫৭, এবার পেয়েছেন ৪২। খিতাপচর ইসলামিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৫৫৬ ভোট, এবার পেয়েছেন ৫ ভোট। বেঙ্গুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পেয়েছিলেন ৫৫৩ ভোট, এবার পেয়েছেন ৮ ভোট।
ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘জনগণের করের টাকা খরচ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তামাশা করেছে। তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এস এম মামুন মিয়া, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইদ্রিস আলী ছিলেন।
পরপর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ১৩ জানুয়ারী উপ-নির্বাচন হয়েছে। এতে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ৮৭ হাজার ৩৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবু সুফিয়ান পেয়েছেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।