প্রচারণার নবম দিনে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৫১
ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার নবম দিন শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুই দলের চার মেয়রপ্রার্থী যেন প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন। প্রথম আট দিনের প্রচারণায় নির্বাচনি এলাকার নানা ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান চার মেয়রপ্রার্থী। আর নবম দিনে এসে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন তারা। কাকতালীয়ভাবে হলেও চারজনের প্রতিশ্রুতির ধরন ছিল অনেকটা একই রকম।
শনিবার প্রচারণায় নেমে নান্দনিক ঢাকা গড়তে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপি মনোনীত ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাপস বলেছেন, ‘আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে উন্নত শহরে পরিণত করা হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, নির্বাচিত হলে অ্যাপসের মাধ্যমে নাগরিকসেবা নিশ্চিত করা হবে। আর বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়ে তোলার। পাশাপাশি খেলার মাঠ, পার্ক, ময়দান, ফুটপাথ দখলমুক্ত করবেন তিনি।
নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী ভোটের আগে কোনো প্রকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া যাবে না। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা নগরীতে মেয়র পদে যারা লড়ছেন, তারা প্রতিশ্রুতিকেই ভোটে জেতার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। আবার নির্বাচন কমিশনও বিষয়টিকে আচরণবিধির ‘চরম’ লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে না।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বাংলাবাজার চৌরাস্তা মোড় থেকে নবম দিনের প্রচারণা শুরু করেন ইশরাক হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব। নগরকে নান্দনিকভাবে সাজাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। বসবাস অনুপযোগী এই শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলাই হবে আমার প্রধান কাজ।’
নির্বাচিত হলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ ঢাকাকে ঢেলে সাজানোরও প্রতিশ্রুতি দেন তরুণ এই মেয়র প্রার্থী। ক্লিন ঢাকা গড়ে তুলতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। ইশরাক বলেন, ‘আমি কদমতলী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকার বেহাল অবস্থা দেখেছি। এই চিত্র শুধু যাত্রাবাড়ী, কদমতলী অথবা শ্যামপুরেই নয়। এটা পুরো ঢাকারই চিত্র। নির্বাচিত হলে এসব সমস্যার সমাধান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে।’
দুপুরে যাত্রাবাড়ি মোড় সংলগ্ন টনি টাওয়ারের সামনে থেকে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করেন ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে আগামী ৫ বছর ঢাকাবাসীর সকল মৌলিক নাগরিক সেবাসহ ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রচিত্তে একটি পরিকল্পনার আওতায় আমরা নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে যাব, সেবা করে যাব।’
দুপুরে রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারের স্বাধীনতা চত্বরে নির্বাচনি গণসংযোগকালে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে জয়লাভ করলে অ্যাপসের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। দূর করা হবে ঢাকার দীর্ঘ দিনের সব সমস্যা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্মার্ট ঢাকা সিটি করতে চাই। ডিএনসিসির দায়িত্ব পালনকালে নাগরিক সেবা দিতে ‘সবার ঢাকা’নামে অ্যাপস তৈরি করেছি। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী হলে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে এই অ্যাপস চালু করব। সবাই সবার কমপ্লেইন করতে পারবেন সেই অ্যাপসের মাধ্যমে।’
আতিকুল জানান, এই অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে সবধরনের নাগরিক সুবিধা পাবে উত্তর সিটির নাগরিকেরা। অ্যাপটির তত্ত্বাবধান তিনি নিজেই করবেন।
তিনি বলেন, ‘৯ মাস দায়িত্ব পালনকালে আমরা নানা সমস্যা চিহ্নিত করেছি, সেসব সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের করা বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেব। তার করা ইউলুপ প্রকল্পের কাজ বন্ধ আছে। এটিও এ বছরের মধ্যে চালু করা হবে। গণপরিবহনগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আমার ঢাকা নামে একটি অ্যাপ তৈরি করে তার মাধ্যমে বাসের টিকিট বিক্রি করা হবে। পরিবহনের একাধিক মালিকানা বাতিল করে কয়েকটি কোম্পানিতে করা হবে। সেখানে পরিবহন ব্যবসায়ীদের জন্য শেয়ার বিক্রি করা হবে।’
দ্রুত যানজট সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেব। যদিও যানজট এ শহরের বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও সবাইকে নিয়ে যানজট সমস্যা দ্রুত সমাধান করব। উত্তর সিটি করপোরেশনের সব যানজটপূর্ণ এলাকায় ইউলুপ তৈরি করা হবে। ফুটপাত, এলইডি লাইট, ড্রেনেজ, রাস্তাসহ আধুনিক পরিকল্পিত বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার কাজ আগামী ছয়মাসের মধ্যে শুরু করা হবে।’
সকালে খিলগাঁও তালতলা এলাকায় গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পেলে দুর্নীতি মুক্তি একটি সিটি করপোরেশন উপহার দেব। মেয়র ও কাউন্সিলর সকলকেই জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে। পার্ক, খেলার মাঠ, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা হবে।’
নবম দিন প্রতিশ্রুতি ফুলঝুরি মেয়রপ্রার্থী রাজধানী সিটি নির্বাচন