Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর কী বার্তা দিচ্ছে


১৯ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৩৬

ঢাকা: রাখাইনে সরকারি নির্দেশনায় চালানো গণহত্যার জন্য জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব যখন মিয়ানমারকে চাপে রেখেছে, দোষারোপ করছে, ঠিক তখনই চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং মিয়ানমার সফর করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন তার সুদূরপ্রসারী আন্তর্জাতিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সফরে এ মোক্ষম সময় বেছে নিয়েছে।

আগামী ২৩ জানুয়ারি আইসিজে’তে (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত) রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে। গোটা বিশ্ব মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপে রাখলেও ওই আদেশের ঠিক আগে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং মিয়ানমার সফরে গিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার অনুমোদনকারী অং সান সু চিকে নির্ভরতা যোগাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের একাধিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এবং সম্পর্কের মাত্রা আরও ঘনিষ্ঠ করতে মিয়ানমার সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন : মিয়ানমারে শি জিনপিং, রাখাইন রাজ্যে চীনের বিশাল বিনিয়োগ!

রাজধানী নেপিডোতে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং’কে উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সফরে রাখাইনের কায়াপিউতে চীনের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুইটি প্রকল্প চীনের বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। বিআরআই মূলত ভূ-রাজনৈতিক, নিরাপত্তা কৌশল, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ গোটা বিশ্বের নিজেদের প্রভাব বলয় সৃষ্টিতে চীনের স্বতন্ত্র একটি উদ্যোগ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধু। যে কারণে উভয়েই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বেইজিংয়ের ওপর আস্থা রেখেছে এবং চীনকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে।

কিন্তু বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে যে, চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর যে ধরনের চাপ সৃষ্টি করার কথা, নিজেদের কৌশলগত স্বার্থের কারণে চীন তা করছে না। এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আইসিজে’র অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের ঠিক আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং নেপিডোতে সরেজমিন উপস্থিত হয়ে মিয়ানমারকে নির্ভয়ের বার্তা দিচ্ছেন।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে ‘শি’স মিয়ানমার ভিজিট অ্যান্ড চায়নাস রিজিওনাল ডিপ্লোমেসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর মিয়ানমার সফরের তিনটি কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে, চীনের রাষ্ট্রপতি এমন এক সময়ে মিয়ানমার সফর করছেন যখন দেশটির সরকার সংখ্যালঘু এবং ভিন্ন মতাবল্বীদের নির্যাতনের কারণে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হচ্ছে এবং মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাতে চায় চীন। দুর্দিনে বন্ধু দেশের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চায়। যাতে বিআরআই বাস্তবায়নে, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চায়নিজ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এবং এশিয়াসহ বিশ্বব্যাপী চায়নিজ প্রভাব প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।

মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রিসিলা ক্ল্যাপ চীনের রাষ্ট্রপতির এই সফর নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘মিয়ানমারের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এশিয়া অঞ্চলে চায়নিজ প্রভাব প্রতিষ্ঠা করাই এ সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য।’

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেনের মতে, চীন বিআরআই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তারা এ প্রকল্পের আওতায় মূলত বড় একটি বন্দর নির্মাণ করছে মিয়ানমারে, যা এক সময়ে আন্তর্জাতিক প্রধান বন্দরে পরিণত হবে। এ প্রকল্প অনুযায়ী, দক্ষিণ রাখাইনের দুইটি বন্দর থেকে তেল-গ্যাস পাইপলাইন এবং ট্রেন লাইনের ব্যবস্থা থাকবে। মিয়ানমারের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে চীনের এটি বড় ধরনের একটি বিনিয়োগ এবং প্রকল্প। আন্তর্জাতিক কৌশলে চীনের জন্য এটি অনেক ইতিবাচক বিষয়, বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের জন্য উদ্বেগজনক।

সাখাওয়াত হোসেনের মতে, চীন যেহেতু বাংলাদেশেরও বন্ধু তাই এ সফর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটোই প্রভাবই ফেলতে পারে। ইতিবাচক হচ্ছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন হয়ত মিয়ানমারকে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মিয়ানমার এমন কোনো ইন্ডিকেশন দেয়নি, বিশেষ করে আইসিজে’তে (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত) যাওয়ার পর মিয়ানমার কিছুটা পিছিয়ে গেছে। এখন ২৩ জানুয়ারি আইসিজে থেকে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হবে, সে আদেশের ওপর নির্ভর করবে চীন মিয়ানমারকে কতটা ইনফ্লুয়েন্স করতে পারবে। নেতিবাচক দিক হচ্ছে, চীন হয়ত আবার নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে পারে। এর কারণ হচ্ছে— চীনের বড় ধরনের কৌশলগত পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চীন মিয়ানমারে বড় আকারের বিনিয়োগ করছে। তাই চীন তার আন্তর্জাতিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারকে বেকায়দায় ফেলার মতো কোনো ঝুঁকি নেবে না।

এদিকে, রোহিঙ্গা সংকট মেটাতে চীন যে মিয়ানমারের প্রতি কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না, এই বার্তা ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং অনেক আগেই দিয়েছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত মধ্য ডিসেম্বরে কক্সবাজারে  গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয়ভাবেই এই সংকটের সমাধান করতে হবে, না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন যে চীন মিয়ানমারকে চাপ দিলেই সমস্যার সমাধান হয় বা চীন যা বলবে মিয়ানমার তাই করবে, এই ক্ষেত্রে চীনকে অনেক বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের মতোই মিয়ানমার একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যেখানে চীন দুই দেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে উভয়কে পরামর্শ এবং উভয়ের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে সহায়তা করতে পারে। আর এসব পরামর্শ বা সমন্বয় গ্রহণ করা পুরোটাই মিয়ানমারের নিজের ওপর নির্ভর করে। তবে বন্ধুত্বের জায়গা থেকে চীন সবসময়েই এ সংকট সমাধানে কাজ করে যাবে।’

চীন মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর