Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবেদন শেষ না হওয়ায় পেছাল পিপলসের অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া


২০ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৩৬

ঢাকা: নির্ধারিত সময়ে পিপলস লিজিংয়ের সম্পদ ও দায়দেনা সংক্রান্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি এখনো। কবে নাগাদ এই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং শুরু হলে শেষ হতে কতদিন লাগবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত বাবদ পিপলস লিজিংয়ের কাছে পাওনা থাকা ২ হাজার কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ ও দায়দেনা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। আর ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকদের অর্থ আনুপাতিক হারে পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এইজন্য গত সেপ্টেম্বর থেকে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস নামক একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটি পিপলসের ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরের আয় ব্যয়, সম্পদ ও দায়দেনা নিরীক্ষা করে গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে একনাবিন নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। ফলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে আরো তিন মাস সময় চাইলে আদালত আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে। ফলে গ্রাহকদের দায়দেনা পরিশোধ করার প্রক্রিয়া শুরু করতে এই প্রতিবেদন আগে দরকার। তারপর পিপলসের সাধারণ ঋণ ও খেলাপি ঋণ আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের অর্থ অনুপাতিক হারে পরিশোধ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ ব্যাপারে রোববার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের নিরীক্ষা কার্যক্রম গত ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান একনাবিন পিপলসের অডিট শেষ না করতে আরো তিন মাস সময় চেয়েছে। তবে আদালত ৪৫ দিন সময় দিয়েছেন। নতুন সময় আগামী ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি শেষ হবে।

তিনি বলেন, পিপলসের সম্পদ ও দায় দেনা সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন পেলে গ্রাহকদের অগ্রাধিবার ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে দায় দেনা পরিশোধের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এটা কবে নাগাদ শুরু হবে তা নির্ভর করছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং পিপলসের বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে পাওনা টাকা উদ্ধার সাপেক্ষে।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের জন্য আবেদন করলে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ দেয়। এতে পিপলসের কাছে ৬ হাজার বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত রাখা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এই টাকা আমানতকারীরা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের কাছে ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। একই সময়ের হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। ফলে আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা। আবার সম্পদের ৬৬.১৪ শতাংশ অর্থ খেলাপি। ফলে এই টাকা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের আমানতের অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে গত ৬ মাসে মাত্র ১২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।

পিপলস লিজিংয়ের আর্থিক অবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর। এছাড়াও পিপলস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬.১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

তবে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিতে আমানতকারী পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা।

পিপলসের বর্তমান সম্পদ: পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট।

পিপলসের কাছে পাওনা টাকা কারা আগে পাবেন: পিপলসের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ টাকা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কেউ থাকলে তাদের ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।

পরবর্তীতে কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারী, তারপর প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা উদ্যোক্তা পরিচালক কোনো অর্থ পাবেন না। তবে সবার টাকা পরিশোধ করার পর যদি টাকা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তারা পাবেন।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালে ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা তোলার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরবর্তীতে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেক ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর কোম্পানির দায় দেনা নিরীক্ষা করতে একনাবিন অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পিপলস লিজিং অবসায়ন পিপলস লিজিং কোম্পানি লিমিটেড

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫ দোকান
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর