জঙ্গি হামলার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করা: আদালত
২০ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১৬
ঢাকা: রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার মামলার রায় ঘোষণার সময় বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি আসামিরা পল্টন ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির মহাসমাবেশে বোমা হামলার মাধ্যমেও ৫ জন নিরীহ ও নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হয়। আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নস্যাৎ করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়।’
আদালত আরও বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সে কারণে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করা ও সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এ জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে আদালত মনে করে।’
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১০ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে বিচারক এ সব কথা বলেন।
পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে বিচারক বলেন, ‘আসামিরা হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম বাংলাদেশ (হুজি) এর সদস্য। তাদের ধারণা বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা কাফের, বিধর্মী, নাস্তিক, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নয়, ইসলাম ধর্মের শত্রু এবং আল্লাহ খোদা মানে না। সে কারণে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে আসামিরা এ বোমা হামলা চালায়।’
আদালত জানান, আসামি মুফতি মঈন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও মাওলানা সাব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে দুটি করে, শওকত ওসমানের বিরুদ্ধে তিনটি, আরিফ হাসানের বিরুদ্ধে ছয়টি, আনিসুল মুরছালিন, মহিবুল মুত্তাকিন ও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে চারটি করে মামলা রয়েছে। আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ বিস্ফোরক আইনের মামলা রয়েছে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে তারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এমনকি আসামিরা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও আসামি। আসামিদের প্রতিটি বোমা হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ মারা গেছে। আসামিরা ইসলামী জঙ্গি হরকাতুল জিহাদের সদস্য এবং আসামি আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি হরকাতুল জিহাদের বাংলাদেশের হেডকোয়ার্টার ছিল।
রায় ঘোষণার সময় পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা মায়িদাহ এর ৩২ নং আয়াতের কথা উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘যে কেউ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে, অন্য কোনো প্রাণীর বিনিময়ে ব্যতীত কিংবা পৃথিবীতে কোনো ফ্যাসাদ সৃষ্টির অপরাধ ছাড়া, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করলো।’