‘জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান’
২০ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:৩২
সংসদ ভবন থেকে: একসময় জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা।
তারা বলেন, একসময় শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকার প্রধানকে (খালেদা জিয়া) বলা হতো আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এখন সেই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিশ্বের অন্যতম সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য, জঙ্গীবাদ, দুর্নীতির দেশ এখন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে উদীয়মান শক্তি। দেশের এই অগ্রযাত্রা বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। এরা দেশকে আবারও পেছনে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দিতে হবে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সরকারি দলের আবদুল আজিজ, শহিদুল ইসলাম বকুল, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপুসহ অন্যরা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাতে আমরা আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। বৈরী অবস্থায় দেশে ফিরে পিতার (জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) স্বপ্ন পূরণের কাজে তিনি হাত দেন। ২১ বছর সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, আর আমাদের কারাগারে বন্দি করে নির্যাতন করে। আমাদের হাতে হাতকড়া, আর তখন যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতার পর অনেকে বলেছিল, বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যের মডেল। কিন্তু আজ বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।
শহীদ আসাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আমরা কারাগার থেকে মুক্তি করেছিলাম। কিন্তু দিনটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও আমরা যথাযথভাবে পালন করি না। পৃথিবীতে অনেক নেতা আসবেন, যাবেন। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো বিচক্ষণ নেতা বিরল। কারাগার থেকে মুক্ত করে এনে পল্টনের ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ থেকে আমরা জাতির পিতাকে কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধু উপাধীতে ভূষিত করেছিলাম।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। একসময়ের শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকার প্রধানকে (খালেদা জিয়া) বলা হতো আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এখন সেই দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বিশ্বের অন্যতম সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছে। এজন্য আমরা গর্বিত।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর শপথ ভঙ্গ করে তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরাও তা স্বীকার করেছে। এই জিয়াই কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিলকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে। ৩৪ বছর জাতিকে অপেক্ষা করতে হয়। কারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালু, জঙ্গিবাদ ও অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তা দেশবাসী জানে। তাই তাদের কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বাংলাদেশের মাটিতে বাস্তবায়িত হবে না।
জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে যাদের নিরাপত্তা প্রদানের কথা ছিল, তারা করেননি। মুজিববর্ষে এই ব্যর্থতার কথাও বলতে হবে। ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলের এলাকায় সমভিত্তিকহারে উন্নয়ন বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বিমান একসময় ধ্বংসের পথে ছিল। আজ বিমান ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাঁচটি অত্যাধুনিক বিমান কিনে বাংলাদেশ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও সুন্দরবনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিদেশিদের জন্য সেফ জোনসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলে হাওয়া ভবন ছিল দুর্নীতির আখড়া। খালেদা জিয়াসহ তার দুই পুত্র হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তারা। এসব কারণে দেশের জনগণ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।